ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

নির্বাচন নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাসস
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যদি সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যাশিত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন হলে কয়েক মাস দেরি হতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা পলাতক হাসিনা গত বছর ক্ষমতা ছাড়ার পর যখন আমাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন আমি হতচকিত হয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেব। প্রশাসনিক কাজে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আমাকে পথ খুঁজে নিতে হয়েছে। তবে যখন সব ঠিক হলো, আমরা সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করলাম।”

নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমার কাছে দেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনই ছিল মূল অগ্রাধিকার।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ঢাকার সরকারি বাসভবনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। আমি তাদের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসছি। গত গ্রীষ্মে সহিংস বিক্ষোভে মানুষ নিহত হয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আপেক্ষিক বিষয়। যদি এটি গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে এখন মোটামুটি সহনীয় মনে হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যার জন্য আগের সরকারকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমি বলছি না যে এসব ঘটনা ঘটতেই হবে। তবে আমাদের বুঝতে হবে—আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা শহর হঠাৎ করে তৈরি করিনি। এটি সেই দেশেরই ধারাবাহিকতা, যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে রাজপথে নেমেছে।

একটি ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর অধ্যাপক ইউনূস বিক্ষোভকারীদের অনুরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে দেশে ফেরেন।

বাংলাদেশের একটি আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে প্রতিবেশী ভারত এখনও এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখানে আদালত, আইন এবং থানা রয়েছে—তারা সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারে। কেবল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলেই হবে না, বরং থানায় গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, এটি তাদের সিদ্ধান্ত। তবে কিছু দিক থেকে এটি সহায়ক হয়েছে, কারণ তারা এমন কিছু করছে যা আমরাও করতে চেয়েছিলাম, যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকারি উন্নয়ন সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম সহযোগী। গত বছর তারা বাংলাদেশকে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু এই সহায়তা বন্ধ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যখন এটি ঘটবে, তখন আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।