সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি

প্রতীকি ছবি

গত মাসের চেয়ে ২৮ টাকা কমিয়ে চলতি মাসে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু কমিশন ঘোষিত  দামে রাজধানীর কোথাও এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গড়ে ১৭৫ টাকা বেশি। বিষয়টি নিয়ে বাজারে তদারকিও নেই বিইআরসির।

রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, কালশী, বনানী ও পুরান ঢাকার অন্তত ৫০টি এলপিজির খুচরা বিক্রেতার দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির এলপিজি সর্বনিম্ন ১ হাজার ৫৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে। এছাড়া, মোহাম্মদপুর এলাকার কৃষি মার্কেটে ওমেরা এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৬৫০ টাকা, টোটাল এলপিজি ১ হাজার ৬৮০ ও বসুন্ধরা এলপিজি ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলপিজি বিক্রেতার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ফ্রেশ এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৬০০ টাকা, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি ১ হাজার ৫৫০, বিএম এলপিজি ১ হাজার ৫০০ ও ওরিয়ন ১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাসাবাড়িতে এ গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব গ্যাস সিলিন্ডারের দামের সঙ্গে আরো ৫০ টাকা বেশি নিচ্ছেন।

তবে আশুলিয়া, গাজীপুর, যশোর, রাজশাহী এমনকি খুলনা ও বরিশাল বিভাগে কোম্পানিভেদে এলপিজির দাম ঢাকার চেয়ে কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে। তবে দু-একটি স্থান বাদে বিইআরসি ঘোষিত দামে কোথাও এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না বলে গ্রাহকরা জানিয়েছেন।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘এলপিজির ঘোষিত দাম বাজারে বাস্তবায়নের বিষয়টি বিইআরসি দেখতে পায় না। এটা বরাবরই কাগজে কলমে ঘোষণা দেয়ার মতো। যে কারণে ভোক্তা কখনই ঘোষিত দামে পণ্যটি পায়নি। দাম বাস্তবায়নে বিইআরসির উচিত ছিল ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে একযোগে বাজার মনিটরিং করা। এখন নতুন কমিশন এসেছে। তাদের এ দায়িত্বটা নিতে হবে। আগের মতো গতানুগতিক ধারায় চললে কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কখনই তৈরি হবে না।’

বিইআরসি নির্ধারিত দামেই বাজারে এলপিজি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অপারেটররা। তারা বলছেন, চলতি মাসে কমিশন যে দাম নির্ধারণ করেছে তার চেয়ে অনেক কোম্পানি কম দামেও এলপিজি বিক্রি করছে। যদি দাম বেড়ে থাকে সেটা খুচরা পর্যায়ে বাড়ছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফ্রেশ এলপি গ্যাসের চিফ মার্কেটিং অফিসার আবু সাঈদ রাজা বলেন, ‘কোম্পানি বা পরিবেশক পর্যায়ে এলপিজি বিইআরসি নির্ধারিত দামেই বাজারে প্রবেশ করছে। এমনকি কম দামেও কোনো কোনো অপারেটর বাজারে এলপি গ্যাস দিচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায় থেকে এ দামটা বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে কমিশন ঘোষিত দামের চেয়ে কমে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। তবে ঢাকায় বেশি দামে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে।’

চলতি রমজানে নিত্যপণ্যের বিভিন্ন দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অস্বস্তি রয়েছে। এর মধ্যে রান্নার গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে জনমনে আরো ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, রমজানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ব্যবহার কম হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও পণ্যটির দাম কম, তাহলে দেশে কেন বাড়ছে?

রাজধানীর ৬০ ফিট সড়ক এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, গত মাসে একটি ১২ কেজি সিলিন্ডার তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছেন। রমজানে একই ওজনের সিলিন্ডার তিনি ১ হাজার ৬৫০ টাকায় কেনেন। দাম যে সরকার কমিয়েছে তার প্রভাবটা কোথায়? সরকার কেন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না—প্রশ্ন তার।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ‘এলপিজির ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম বেশি এটা সত্য। তবে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্য আমরা রমজানের আগে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম, যাতে ভোক্তা অধিকার নিয়ে বাজার মনিটরিং করা হয়। পরে বিষয়টি আরো জোরালো তদারকির জন্য বিভাগীয় কমিশনারদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। আমাদের বাজার মনিটরিং করার জন্য লোকবল নেই। যে কারণে জেলা প্রশাসন দিয়ে বাজার মনিটরিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা পুনরায় বিষয়টি তদারক করার জন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলব।’

তথ্যসুত্র: বণিক বার্তা

আরবি/এসবি

Link copied!