ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

আওয়ামী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেই চলছে তাঁতশিল্প

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও দেশের ৬০ লাখ তাঁতির ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। এখনো সেই পুরোনো আওয়ামী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেই চলছে তাঁত বোর্ডের কার্যক্রম।

বিভাগীয় তদন্ত কমিটির দুর্নীতি ও অনিয়মে বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার কামনাশীষ দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও নেপথ্য থেকে তার নির্দেশনাতেই চলছে সবকিছু। বোর্ডের সদস্য (যুগ্মসচিব) দেবাশীষ নাগের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের সব কাজ এখন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বোর্ডের সিন্ডিকেট ও তাঁতী লীগ নেতা দুর্নীতিবাজ জাহিদুল ইসলামের প্রভাবে আটকে আছে জাতীয় তাঁতি সমিতির অ্যাডহক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন। ফলে সুতার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য তাঁত। বেকার হচ্ছেন হাজারো হতদরিদ্র তাঁত শ্রমিক ও তাঁতি।

জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটের কারণে জাতীয় তাঁতি সমিতির আহ্বায়ক কমিটি গঠন না করায় তাঁতি সমাজের সুতা আমদানি বন্ধ থাকায় অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় তাঁতি সমিতির কোনো কমিটি না থাকায় অচল হয়ে পড়ছে তাঁতশিল্প। সুতার অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে অসংখ্য তাঁতকল। বেকার হচ্ছেন লাখো তাঁতি। সিন্ডিকেটের থাবায় ৬০ ভাগের বেশি তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৌশলে সাধারণ তাঁতিদের জন্য সুতা আমদানি বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিজেরা এলসি খুলে ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন এবং এখনো নিচ্ছেন। অথচ সরকার-নির্ধারিত রেয়াতি দামে সুতা আমদানির জন্য তাঁতি সমিতির কয়েকশ আবেদন তাঁত বোর্ডে জমা পড়লেও আড়াই বছরের অধিক সময় ধরে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

তাঁত বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান আবু আহমদ ছিদ্দীকী (অতিরিক্ত সচিব) এ সিন্ডিকেটের প্রভাব ভাঙতে পারছেন না। গঠন করতে পারছেন না, দেশের সমগ্র তাঁতি সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় তাঁতি সমিতি। হাসিনা সরকারের পতনের পর তাঁত বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জাতীয় তাঁতি সমিতির (অ্যাডহক) আহ্বায়ক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের জন্য সারা দেশ থেকে তিনটি প্রস্তাব সংবলিত আবেদন জমা পড়ে।

আবদুস সামাদ খানকে  আহ্বায়ক করে পাঠানো কমিটির প্রস্তাব আসে সমিতির সাধারণ সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের শক্তি সমর্থিত তাঁতি সমাজের পক্ষ থেকে। এ প্রস্তাবিত কমিটির মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকার সমর্থিত কেউ নেই। আবদুস সামাদ খানের কমিটির প্রস্তাবটি বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান ও সদ্য সাবেক দুজন উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই অনুমোদিত হয়ে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তবে তাঁত বোর্ডের সিন্ডিকেটের বাধার কারণে সামাদ খানের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করছেন না চেয়ারম্যান আবু আহমদ ছিদ্দীকী।

অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট দোসর ও তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মো. জাহিদুল ইসলাম এবং আবদুর রশিদ নামের দুজন তাঁতী লীগ নেতাকে আহ্বায়ক করে পৃথক দুটি আহ্বায়ক কমিটি প্রস্তাবিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তাঁত বোর্ডে। এতে কোনো উপদেষ্টার অনুমোদন বা স্বাক্ষর নেই।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুর রউফ বলেন, গত কয়েক বছরে অন্যান্য খাতের মতো প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এই তাঁতশিল্পকে। বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় জিএম কামনাশীষ দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই এ খাতটিতে একটা শৃঙ্খলা ফিরে আসুক।

জাতীয় তাঁতি সমিতির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ব্যাপারে বস্ত্র সচিব বলেন, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের কমিটিতে ছিলেন তারা আর কমিটিতে আসতে পারবেন না।