২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন নীতিতে ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ।
শনিবার (৮ মার্চ) ঢাকায় এক বিশেষ সংলাপে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় মার্কিন সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি।’
তবে ১৯৭১ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি ধারাবাহিকতা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
মার্কিন এই কূটনীতিক এও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে।
‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তাদের অর্থায়ন নীতি এবং চলমান সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, এবং গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে সুশাসন সংস্কারের জন্য ব্যবহার করা উচিত।’
এ সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় তার ‘নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়’, এমন প্রশ্নের জবাবে ‘বাংলাদেশ ফাস্ট নীতি’ গ্রহণের পরামর্শ দেন এই মার্কিন কূটনীতিক।
পাশাপাশি তরুণদের উদ্যোগ ও আগামীর সম্ভাবনার প্রশ্নে জেন-জি’দের সুযোগ দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বক্তব্যে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন ড্যানিলোভিচ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো শাসক দলের জবাবদিহিতার অভাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে হলে একটি শক্তিশালী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য। স্বৈরাচারী শাসন কখনোই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। মিডিয়ার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক আলোচনাকে শক্তিশালী করতে নাগরিক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা উচিত।’
এ সময় ভারতের চোখে সার্বভৌম বাংলাদেশকে কখনোই দেখা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন ড্যানিলোভিচ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই সংলাপ আয়োজন করে। সংলাপের মূল বিষয় ছিল- গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক।
এতে জন এফ ড্যানিলোভিচের সাথে আরও যোগ দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।
তাদের আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রসঙ্গ। এমনকি গুজব মোকাবিলায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে মত দেন তারা।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইলাম বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমেরিকান জনগণকে সচেতন করার জন্য তার সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ছোট সংগঠন গঠন করি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমেরিকান জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করি। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তার সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত, বিশেষ করে গত ১০ বছরে আমি বাংলাদেশ সফর করতে পারিনি, ভিসার জন্য।’
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থী, রাজনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ।
আপনার মতামত লিখুন :