ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

চোখ খুলেছে ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়া, আশান্বিত চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
প্রতীকী ছবি।

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়া প্রথমবারের মতো চোখ খুলেছে। তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে।

সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ শিশুটির বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আজও তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিস্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুই এক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।

শিশুটির চিকিৎসার জন্য সিএমএইচের প্রধান সার্জনের নেতৃত্বে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন শল্য বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ, অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু সার্জন, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ এবং থোরাসিক সার্জন।

বোর্ডের একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকে জানান, শিশুটি প্রথমবারের মতো চোখ নাড়িয়েছে। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে এবং এখন আর খিঁচুনি নেই। চিকিৎসকরা আশাবাদী, শিশুটির শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে।

গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের (৫০) লালসার শিকার হয় শিশুটি। ঘটনার পর অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

একজন চিকিৎসক জানান, শিশুটির যৌনাঙ্গে ও গলায় গভীর ক্ষত রয়েছে। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল এবং বুকে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, যার ফলে ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বাতাস প্রবেশ করেছে। রোববার (৯ মার্চ) সকালে অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য টিউব বসানো হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ শিশুটির দুলাভাই, দুলাভাইয়ের বাবা এবং আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালত আসামি হিটু শেখের সাত দিন এবং অন্য তিনজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

হাইকোর্ট ধর্ষণের শিকার শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সংক্রান্ত সব তথ্য অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, যারা ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ করতে হবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া, ধর্ষণের মামলায় কোনো জামিনের সুযোগ থাকবে না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান নেই। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও বিচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকার আশ্বাস দিয়েছে, মাগুরার এ মর্মান্তিক ঘটনার বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।