আওয়ামী লীগ আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ ভালো। তবে চীনের সঙ্গে সে তুলনায় ছিল কম।
তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তন হলে দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কেও পরিবর্তন ঘটছে।
ওই সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির সঙ্গে ঢাকার টানাপোড়েন শুরু হয়। উল্টোদিকে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক ক্রমেই উন্নতি ঘটছে।
ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের এমন চিত্র উঠে এসেছে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপেও।
সেখানে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশ মনে করেন অভ্যুত্থানের পর এই ক’দিনে ঢাকা-বেইজিংয়ের সম্পর্ক ইতিবাচক। অন্যদিকে ঢাকা-নয়াদিল্লির সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক মনে করছেন মাত্র ১১ শতাংশ।
জরিপটি করেছে সেন্টার পর অলটারনেটিভস। ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক জরিপটি ঢাকার একটি হোটেলে মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দেশের ৩২ জেলায় অনলাইন-অফলাইনে জরিপটি চালানো হয়।
জরিপে দুই হাজার ৬৮১ জন অফলাইনে এবং দুই হাজার ৬৭৪ জন অনলাইনে অংশ নেন।
জরিপ বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশের অভিমত চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন ভালো হচ্ছে। তবে ভালো অথবা মন্দ কোনোটাই নয় এমন মত দেন ২৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের বিষয়ে ভালো মত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। আর দুই দেশের ভালো সম্পর্কের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ।
এছাড়া দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির পক্ষে মত দেন যথাক্রমে প্রায় ৭৯, ৭৪ ও ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
জরিপে ৫ আগস্টের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কীভাবে দেখে তাও উঠে এসেছে।
এক্ষেত্রে চীনের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ ইতিবাচক মত দেন। আর জরিপের পাঁচটি দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে নেতিবাচক মত দিয়েছেন, যা ৫৯ শতাংশ।
এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে ব্যক্তিগতভাবে যেতে বা তাদের সন্তানদের পাঠাতে ইচ্ছুক। এই হার ২০২২ সালের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।
তাছাড়া প্রায় ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ২০২২ সালের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।
জরিপের ফল উপস্থাপন করেন সেন্টার পর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘জরিপে অংশগ্রহণকারীর বেশির ভাগ উত্তরদাতা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করেছেন, যা সম্পর্কের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপকতার প্রতিফলন।’
চীনের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেরা বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন।