প্রত্যুষ কুমার মজুমদার

সবার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জকে ঢেলে সাজাতে চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ১০:৩০ পিএম

সবার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জকে ঢেলে সাজাতে চাই

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ।

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে সমাজবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে দুবার এমএ করা এই পুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জে এসপি হিসেবে যোগদান করেন গত বছরের ৩০ আগস্ট। এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ঘটনাবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় যোগদান করেন ২৫তম ব্যাচের এই বিসিএস কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা, সমসাময়িক ঘটনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি দিলীপ কুমার মণ্ডল।

রপালী বাংলাদেশ: আপনি যখন নারায়গঞ্জের এসপি হিসেবে যোগদান করেন, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল অস্থিতিশীল। কী চ্যালেঞ্জ নিয়ে তখন এই জেলায় যোগদান করলেন?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: সেই সময় পুলিশ ঠিকমতো কাজ করছিল না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল ভঙ্গুর অবস্থায়। প্রথমেই পুলিশের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করি। পুলিশের কাজে উৎসাহ দেওয়া ছাড়াও আমরা সব বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করার চেষ্টা করেছি। নারায়ণগঞ্জ সব সময়ই একটি আলোচিত জেলা। এই জেলায় পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে কাজ করবে, আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।

রূপালী বাংলাদেশ: অন্যান্য জেলার চেয়ে এই জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করছেন?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: ৫ আগস্ট-পরবর্তী ঢাকা ও গাজীপুরে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতা ছিল। আমাদের নারায়ণগঞ্জেও প্রচুর গার্মেন্টস রয়েছে, যেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। নারায়ণগঞ্জে যেন এই সেক্টরে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা বিভাগওয়ারী সমন্বয় করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সোনবাহিনী, গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয় করে আমরা কাজ করেছি। এ কারণে নারায়ণগঞ্জে কোনো অরাজকতার সৃষ্টি হয়নি। আমি তো মনে করি, এই জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক জেলার চেয়ে ভালো। আমরা উত্তমটা দেওয়ারই চেষ্টা করছি। আর এখানে আমার একার কোনো কৃতিত্ব নেই। আমাদের আন্তঃবিভাগীয় সম্পর্কটা চমৎকার।

রূপালী বাংলাদেশ: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ বিভাগে কাজ করতে গিয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: ১ কোটি মানুষের বসবাস এই নারায়ণগঞ্জে। সেই হিসাবে পুলিশ আছে মাত্র ১ হাজার ৯০০ প্লাস। এত কমসংখ্যক পুলিশ দিয়ে এত বড় জনবল সামলানো কঠিন। তার পরও আমরা চেষ্টা করি স্বল্প পুলিশের সর্বোচ্চ ব্যবহার। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে।

রূপালী বাংলাদেশ: নারায়ণগঞ্জের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলো কী বলে মনে করছেন?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: নারায়ণগঞ্জের অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। এই জেলায় ভাসমান লোকজনের সংখ্যা বেশি। মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকে রিকশা চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাদক, ছিনতাই কিংবা চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

রূপালী বাংলাদেশ: এ থকে উত্তরণের উপায় কী?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। যদি শিল্প-কারখানা অস্থিতিশীল হয়, তখন আমরা শ্রমিক-মালিক একসাথে বসি।

রূপালী বাংলাদেশ: এত চেষ্টার পরও কিছু বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। আপনার মতামত কী?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: প্রতিটি মৃত্যুই পীড়াদায়ক। সে যে-ই হোক। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করতে সচেষ্ট হচ্ছি।

রূপালী বাংলাদেশ: নারায়ণগঞ্জে মব জাস্টিস নিয়ে কিছু বলুন। কিংবা ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আপনি কী বলবেন?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: নারায়ণগঞ্জে মব জাস্টিসের কোনো ঘটনা তেমনটি ঘটেনি। কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে, এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। নারায়ণগঞ্জে এরকম কোনো ঘটনা না ঘটলেও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যখনই এই অপরাধ ঘটবে, আমরা অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসব। আশা করি সবাই সতর্ক থাকবে।

রূপালী বাংলাদেশ: নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

প্রত্যুষ কুমার মজুমদার: নারায়ণগঞ্জকে ভালোবাসি। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ভালোবাসি। আমার কোনো আচরণে কেউ যেন কষ্ট না পায়। ভালো থাকুক বাংলাদেশ। সব সময়ের জন্য নারায়ণগঞ্জ যেন ভালো থাকে।

দুই পুত্রসন্তানের জনক প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। তাঁর স্ত্রী সুমি মজুমদার ২৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!