ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হরেদরে সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলার প্রথা বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার (১২ মার্চ) রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজধানীর শাহবাগে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম লিখেছেন, “শাহবাগে যারা গিয়েছিল, তাদের একটি বড় অংশ ‘চেতনা’র অন্ধতায় পড়েছিল। অনেক ছাত্র-তরুণ ইসলামবিদ্বেষ থেকে নয়, বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সেখানে গিয়েছিল। তরুণ প্রজন্মের আবেগকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের মুজিববাদী অংশ কাজে লাগিয়ে দেশে মবোক্রেসি (মবতন্ত্র) প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার ফলস্বরূপ দীর্ঘ এক দশক ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—যেখানে বিরোধী দলের কর্মীরা গুম, খুন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।”

তবে, শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-তরুণ তাদের ভুল বুঝতে পেরে মুজিববাদী বয়ানের বাইরে যেতে চেয়েছে উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “গত কয়েক বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা অংশগ্রহণ করেছে। অনেকেই আহত ও নিহত হয়েছে। তারা আমাদের সহযোদ্ধা, আমাদের কমরেডস। এ অভ্যুত্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেই তারা লীগ ও মুজিববাদের পরাজয় নিশ্চিত করেছে। তারা ইতোমধ্যে তাদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছে।”

মাহফুজ আলম আরও বলেন, “আমরা অভ্যুত্থান-উত্তর সময় পৌঁছেছি। এখানে জামায়াত বা শিবিরের কর্মীদের ‘রাজাকার’, ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলে অভিযুক্ত করার যে বয়ান রয়েছে, তার বিরোধী আমরা। তেমনি, শাহবাগের ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। এ ইসলামফোবিয়ায় আমি নিজেও শিকার হয়েছিলাম। শাহবাগের সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ‘ঊন-মানুষে’ পরিণত করেছিল।”

তিনি আরো যোগ করেন, “তবে পুরাতন ‘শাহবাগী’, যারা এখনো শাহবাগের মুজিববাদ, ভারতপন্থা এবং শেখ পরিবারের প্রতি আনুগত্যকে নিজেদের আদর্শ মনে করেন, তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয়। এরা গুম ও গণহত্যার উস্কানি দিয়েছিল এবং ন্যায্যতা তৈরি করেছিল; এমনকি জুলাই গণহত্যার সময়েও এরা চুপ ছিল, কিছু কিছু তো বৈধতা উৎপাদন করতে ব্যস্ত ছিল। বিদেশ থেকে যারা এখনও ফ্যাসিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছে, তাদের একটি বড় অংশ শাহবাগের ফ্যাসিবাদী, এরা জনগণের শত্রু, ন্যায্যতা ও গণতন্ত্রের শত্রু, গণ-অভ্যুত্থানের শত্রু।”

তিনি বলেন, “তাদের বিচার দ্রুত শেষ করা উচিত।”

মাহফুজ আলম বলেন, “অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে শাহবাগে বেড়ে ওঠা মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি সব পক্ষকেই বাদ দিতে হবে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সহনাগরিকদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সংলাপ ও সংহতির দিকে সবাইকে এগুতে হবে। শাহবাগের ছাত্র-তরুণ যারা মুজিববাদের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মব উস্কে দেওয়া বা বিভেদ সৃষ্টি করা সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই থাকবেই। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও মৈত্রী বাড়াতে হবে, শত্রু কমাতে হবে এবং চিহ্নিত শত্রুর দীর্ঘমেয়াদে পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।”