এক দশক আগে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক নয়ন বাছারের পায়ে গুলি করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুবের আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। পরে গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য সূত্রাপুর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, সূত্রাপুর থানা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. আমানুল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. এরশাদ হোসেন এবং কনস্টেবল কামাল হোসেন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী নয়ন বাছার বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার গোবিন্দপুর গ্রামের প্রভাষ বাছারের ছেলে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়ার সময় ছাত্রদলের কর্মী হলেও পরবর্তীতে লাভ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহমানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদকের পদ।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের দাবিতে ডাকা অবরোধের সমর্থনে মিছিলে যোগ দিতে রওনা হন ভুক্তভোগী নয়ন বাছার। পথিমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা থেকে এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ৪০-৪৫ জন নয়নকে ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তর পাশে ধরে আনে। তখন শাখারী বাজার মোড়ে কে বা কারা সুপ্রভাত পরিবহনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর জের ধরে আসামি সূত্রাপুর থানার সাবেক উপপরিদর্শক মোঃ আমানুল্লাহ নয়নের নিকট পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে, তোর পরিবার হতে এখুনি টাকা এনে দে। তা-না হলে তোকে গুলি করে মেরে ফেলব।’
বাদী চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে এসআই রফিকুল ও আসামি এসআই এরশাদ হোসেন বাদীকে ধরে রাখে এবং আসামি এসআই আমানুল্লাহ মুঠোফোনে কারো কথা বলে। প্রায় ৪-৫ মিনিট পরে আসামি এসআই আমানুল্লাহ আসামি কনস্টেবল কামালকে হুকুম করে যে, ওর (নয়ন) হাতে হ্যান্ডকাপ লাগাও। তখন আসামি কামাল বাদীর হাত পিছনে নিয়ে বাদীর হাতে হ্যান্ডকাপ লাগায়। তখন এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদ বলে যে, ‘তুই শিবির, তুই গাড়িতে আগুন দিয়েছিস।’ তখন বাদী বলে ‘আমি হিন্দু, আমি শিবির না।’
এ কথা বলার সাথে সাথে এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদের নির্দেশে কনস্টেবল কামাল হোসেন ভুক্তভোগী নয়নকে রাস্তায় ফেলে দেয় এবং বাম পায়ের হাঁটুর উপরের অংশে দুই রাউন্ড গুলি করে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নয়নকে গাড়িতে উঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে মামলার আসামি চার পুলিশ সদস্য। পরে মিডিয়া কর্মীরা উপস্থিত হলে তারা গুলিবিদ্ধ নয়নকে নিয়ে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।