মাগুরার শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন।
ফরিদা আখতার লেখেন, শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না। আজ সকালে একবার খবর এলো আছিয়ার হার্ট এটাক হয়েছে চারবার। দুপুরের মধ্যে আরো দুইবার এটাক হোল, তখন চিকিৎসকরা আর আশা রাখতে পারেন নাই। বেলা ১ থেকে ১.৩০টার মধ্যে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আসিয়া সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল।
তিনি লেখেন, আমরা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম অন্তত একজন লাশের সাথে যাবো। তাই আমি গেলাম। প্রথমে সিএমএইচে গিয়ে অপেক্ষা করতে হোল পোস্ট মর্টেমের জন্য। প্রায় পাঁচটা বেজে গিয়েছিল। আমি বলতে চাই সিএমএইচ যেভাবে তার দেখা শোনা করেছে, তারা যেভাবে চিকিৎসা করেছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আছিয়ার মৃত্যুর পর সব বাহিনীর প্রধানরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সব দায়িত্ব পালন করেছেন। হেলিকপ্টার প্রস্তুত রেখেছেন লাশ মাগুরা পাঠাবার জন্য।
তিনি আরও লেখেন, আমি সিএমএইচের মরচুয়ারিতে একটি কক্ষে আছিয়ার মা ফাতেমা, তার মামী ও অন্যান্য স্বজনদের সাথে বসে অপেক্ষা করছিলাম। আমি এর আগে একদিন আইসিইউতে আছিয়াকে দেখতে এসেছিলাম বলে তার মা আমাকে চিনতে পেরেছেন। সেদিন দেখেছিলাম আছিয়ার গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যার যে বর্বর চিহ্ন গভীরভাবে রয়ে গেছে তা ছিল ভয়াবহ।
এই উপদেষ্টা লেখেন, ফাতেমা একনাগাড়ে বিলাপ (নিম্নস্বরে) করছিলেন। রোজা রেখেছিলেন, তাই অনেক দুর্বলও ছিলেন। কতই বা বয়স তার। পঁয়ত্রিশ হবে কিনা সন্দেহ। আমি তার বিলাপে যতটুকু শুনেছি একটু বলি। তিনি বলছিলেন, ‘আছিয়া অনেক চঞ্চল হাসিখুসি মেয়ে ছিল। পড়াশোনায় ভাল ছিল। তার জন্য কোন প্রাইভেট শিক্ষক না রেখেও সে পরীক্ষায় খুব ভাল করেছে’। আবার বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে একটু দুধ খেতে পারলো না’। সে দুধ খেতে ভালবাসতো মনে হোল। তাই মায়ের সে কথাই বারে বারে মনে হচ্ছিল। ফাতেমা দিনের পর দিন (গত প্রায় ৭ দিনের মতো) আছিয়ার যে খুব কষ্ট হচ্ছিল তা বুঝতে পারছিলেন।
তিনি লেখেন, গত দুইদিন ধরে তিনি আল্লাহ’র কাছে দোয়া করছিলেন ‘আল্লাহ তোমার কাছে নিয়ে যাও’। একদিন তার চোখের মণি একটু নড়েছিল। সেদিন ফাতেমা আছিয়াকে মা আমার ময়না পাখী বলে ডাকলেন। ফাতেমা বললেন, ‘সে ডাকে আছিয়া সাড়া দিয়েছিল। তার চোখের কোণে পানি ছিল’।
সবশেষ তিনি লেখেন, ফাতেমার বিলাপে আরো অনেক কথা ছিল, কিন্তু ভাল করে শোনা যাচ্ছিল না, তাই লিখতে পারলাম। কিন্তু একটি কথা তিনি স্পষ্ট করে বলছিলেন, সেটা হচ্ছে- ‘আছিয়ার এই ধর্ষণ ও হত্যার বিচার যেন অবশ্যই হয়’। কঠিন শাস্তি চান তিনি। তখন তার চোখে মুখে ক্রোধ ফুটে উঠেছিল।
আছিয়ার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার অবশ্যই হবে।
আপনার মতামত লিখুন :