ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনেক জেলা প্রশাসকের (ডিসি) ভূমিকা ছিল নারকীয় মঞ্চের খলচরিত্রের মতো। ইতিমধ্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২২ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে ৩৩ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এবার ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৬ জেলা প্রশাসকের অনিয়মের অভিযোগ খুঁজে পাওয়া গেছে। এই ৩৬ ডিসি নির্বাচনে ৩৬ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় তারা টাকার ভাগবাটোয়ারা পেয়েছেন। এ ছাড়া নানান আর্থিক অনিয়মে জাড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে প্রার্থীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে এসব ডিসির বিরুদ্ধে।
রাষ্ট্রীয় দুটি গোয়েন্দা সংস্থা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তদন্তে দেশের ৬৪ জেলার ডিসিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম খোঁজার কাজ শুরু করা হয়। এর মধ্যে ৩৬ জেলার ডিসিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম খুঁজে পায় সংস্থা দুটি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
দুই গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দুই কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালে নির্বাচনের আগে সরকার ৬৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়। নির্বাচনে তারা নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আর্থিক অনিয়মেও জড়িয়ে পড়ে অধিকাংশ ডিসি। এ দুই কর্মকর্তা আরও বলেন, ৩৬ ডিসির অনিয়ম খুঁজে পাওয়া গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন- খুলনা, বাগেরহাট, নীলফামারী, সাতক্ষীরা, রংপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বগুড়া, জয়পুরহাট, বরিশাল, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট, হবিগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার ডিসি রয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ৩৬ ডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এ তালিকায় বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা,যশোর, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নীলফামারী,চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, মাদারীপুর ও ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার ডিসি রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অভিযোগের রয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট জেলার দায়িত্ব পালন করার সময়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করেছেন ৩৬ জেলার ডিসিরা। এমনকি ডামি নির্বাচনেও পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ডিসিরা অনিয়ম করেছেন। এ ছাড়া ডিসির দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন অসৎ পথ অনুসরণ করে নানা সুবিধা নিয়েছেন তারা।
গোয়েন্দা সংস্থা দুটির তদন্তে উঠে এসেছে, ৩৬ ডিসির বেশিরভাগই সংশ্লিষ্ট জেলার বালুমহল থেকেও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এসব ডিসি জেলার সভা-সেমিনারে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন।
জানা যায়, অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর্থিক অনিয়মের অধিকতর তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ৩৬ ডিসির তালিকা পাঠিয়েছে।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ডিসিদের বিরুদ্ধে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। তবে একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। কারণ ডিসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে অধ্যাদেশ জারি করে। ডিসিদের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে দুদককে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে দুদক সচিব বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।