মিয়ানমারে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। যার বড় অংশই এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। তারা ফিরতে চান নিজ মাতৃভূমিতে। কিন্তু নানা উদ্যোগেও আটকে গেছে তাদের ঘরে ফেরা। এতে অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে রোহিঙ্গাদের সাথে কথাও বলেছেন তিনি। শুনেছেন তাদের দুঃখগাঁথা। এসময় মহাসচিবের কাছে নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানান রোহিঙ্গারা।
এসময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এখন বিশ্বের সহায়তা প্রয়োজন। তারা বাড়ি ফিরতে চায়, মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি। নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এই সংকটের প্রধান সমাধান।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমি অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং তাদের সাহসে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাদের সংকল্প আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। অনেকেই মিয়ানমারে তাদের যন্ত্রণা এবং তাদের এখানে আসার গল্প শেয়ার করেছেন।’
‘মিয়ানমারের সব পক্ষের প্রতি আমার বার্তা, সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করুন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। আর কোনও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং সহিংসতা উদ্রেক না করতে সহায়তা করুন।’
আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনও সংকটময়, বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে। যতক্ষণ না রাখাইনে সংঘাত এবং ব্যবস্থাগত নির্যাতন শেষ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের তাদের সাহায্য করতে হবে। আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে আছি। আর্থিক সহায়তায় কাটছাঁটের কারণে একটি অবর্ণনীয় বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে এবং মানুষ মারা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ বিশাল সহায়তা করেছে। তারা তাদের ভূমি, বন, সীমিত পানি এবং অপ্রচলিত সম্পদ ভাগ করে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন সময় এসেছে সহায়তার। সময় নষ্ট করার কোনও সুযোগ নেই।’
জাতিসংঘ মহাসচিব ২০১৮ সালেও একবার কক্সবাজার পরিদর্শনে এসেছিলেন।
সেই কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই শিবিরগুলো জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা অত্যন্ত গরম এবং আগুনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় এবং বর্ষা মৌসুমে বন্যা এবং বিপজ্জনক ভূমি স্লাইড ঘরবাড়ি এবং জীবন ধ্বংস করে দেয়। আবশ্যক খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি, এখানে মানুষের শিক্ষার, দক্ষতা উন্নয়ন প্রয়োজন।’
‘জাতিসংঘের সংস্থাগুলো— যেমন মানবিক এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোও বিশাল বাজেট কাটছাঁটের মুখোমুখি।
এটি মানুষের উপর সরাসরি এবং মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। শরণার্থী জনগণ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। অবশেষে সমাধানটি মিয়ানমারে খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছেড়ে দেব না যতক্ষণ না পরিস্থিতি শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
এরআগে দুপুর ১টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স যোগে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছান তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও।
বিমানবন্দর থেকে সরাসরি উখিয়ায় যান জাতিসংঘ মহাসচিব। সেখানে গিয়ে প্রথমেই রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন। কথা বলেন রোহিঙ্গা শিক্ষাথীদের সাথে। পরে পরিদর্শনে যান রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। কথা বলেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির সঙ্গেও। এসময় রোহিঙ্গাদের কথা শুনেন তিনি।
এসময় সেখানকার পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতারে যোগ দেন।
আপনার মতামত লিখুন :