পুরুষদের ধর্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশের আইনে কী আছে?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৮:৪৫ পিএম

পুরুষদের ধর্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশের আইনে কী আছে?

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

যদি কখনো পুরুষ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে সে বিষয়টি বাংলাদেশে উপেক্ষিত রয়ে যায়। 


এক্ষেত্রে পুরুষ বা ছেলেকে ধর্ষণের ঘটনা অধিকাংশ ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয় না। ভুক্তভোগীকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা কম। কেননা বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট আইনে কোনো পুরুষ যদি ধর্ষণের শিকার হয়, তার জন্য বিচারের কোনো বিধান নেই।

পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই পুরুষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তাদের আলাদা করে আইন থাকলেও বাংলাদেশে চোখে পড়ার মতো আইন দেখা যায় না। এদিকে এক গণনায় দেখা গেছে  বাংলাদেশে সারা বছরই পুরুষ ধর্ষণে ঘটনা ঘটেই চলেছে।  

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২২৬ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে মামলা করা হয়েছে ১৪৬টি।

২০২০ থেকে ২০২৪ সাল এই পাঁচ বছরে ২৪ জন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। এ সময়ে মামলা হয়েছে ১৪টি।

২০২৩ সালে ৭৫ জন এবং ২০২৪ সালে ৩৬ জন ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

 

পুরুষ ধর্ষণে বাংলাদেশের আইনে যা বলা আছে

বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় শুধু পুরুষ দ্বারা নারীদের ধর্ষণের বিষয়ে আছে। এখানে সম্মতি ছাড়া নারীদের দ্বারা নারী, নারীর দ্বারা পুরুষ, পুরুষ দ্বারা পুরুষ এবং একজন ট্রান্সজেন্ডার আরেক ট্রান্সজেন্ডারের দ্বারা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নেই।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘কোনো ছেলে যদি ধর্ষণের শিকার হন, তার জন্য আইনে কোনো প্রভিশনই (বিধান) নেই। কেননা ছেলেদের ধর্ষণের বিষয়টা আইনে কখনো চিন্তাই করা হয়নি’

২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বলা হয়েছে- নারী ও ১৬ বছর বয়সের কম বয়সী মেয়ে শিশুদের সুযোগ থাকলেও এ আইনে ছেলে শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।

অর্থাৎ, ১৬ বছরের বেশি বয়সী কোনো ছেলে ধর্ষণের শিকার হলেও প্রচলিত আইনে তা বিচারের কোনো সুযোগ নেই।

আইনের এই ধারায় আনন্যাচারাল অফেন্স বা প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি স্বেচ্ছায় কোনো পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তারিক রিজভী বলেন, ‘পেনাল কোডের আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী ধর্ষণ হয় না, এটা হলো প্রথম সমস্য ।’

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেও পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের জন্যে কোনো ধারা না থাকায়, সেই অনুযায়ীও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জহিরুল ইসলাম খান পান্না মনে করেন ‘ছেলেদের সাথেওতো এটি জোরপূর্বক ঘটানো হচ্ছে। ফলে এক্ষেত্রেও সমান শাস্তিই হওয়া উচিৎ।’

আইনজীবী ইশরাত হাসান মনে করেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের কেউ ধর্ষণের শিকার হলে, তারজন্যেও আলাদা কোনো আইন নেই। কিন্তু তাদেরতো বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’

আরবি/জেডি

Link copied!