দেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে সামাজিক অপরাধ। অনৈতিক সম্পর্ক, মাদকাসক্তি, পারিবারিক কলহের জের, জমি নিয়ে বিরোধ এবং নৈতিক অবক্ষয় থেকে সামাজিক অপরাধ ঘটছে।
সারা দেশে ঘটে যাওয়া সামাজিক অপরাধগুলোর পরিসংখ্যান পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধের ডাটাবেজ অনুযায়ী বলা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৮৭০টি। এদের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৪৪০টি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটেছে ১ হাজার ৪৩০টি। চলতি মার্চ মাসে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে। সারা দেশে নারী বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রয়ারি মাসে সারা দেশে ৫৯৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকই খুনের ঘটনা ঘটেছে সামাজিক অপরাধকে কেন্দ্র করে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৫টি। এর মধ্যে ধর্ষণের পর চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। একজন ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের শিকার ৫৭ জনের মধ্যে ১৬ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী রয়েছে। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে তিন জন কিশোরী ও ১৪ জন নারী, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন দুই জন নারী। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ১৯টি, যৌন হয়রানি ২৬টি, শারীরিক নির্যাতনের ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে এই মাসে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মূল কারণ—আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা। আইন প্রয়োগের জায়গাটি অনেক দুর্বল। এই মুহূর্তে নীতিনৈতিকতা, আদর্শ ও মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয় ঘটেছে, সেটা রোধ করতে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। আর সামাজিক অন্যান্য আয়োজন বা ব্যবস্থাগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে আইনের ওপর শতভাগ নির্ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সূত্র জানায়, পুলিশ এখনো নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বদলির জন্য অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘কানভারী করার’ অভিযোগ পাওয়া গেছে। পোস্টিং প্রতিযোগিতার কারণে নিজ কর্মস্থলে শতভাগ মনোযোগী হয়ে কাজ করছেন না পুলিশ সদস্যরা। আবার কিছু কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ মেলাচ্ছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা ভেবেছেন নির্বাচিত সরকার এলে তারা জোরেশোরে কাজ করবেন। এতে পুলিশের কর্মকাণ্ড কমে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :