সারা দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বিভাগভিত্তিক দৈনিক উপস্থিতি বা হাজিরার হার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্যাশবোর্ডে নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এ পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকছে।
সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষদিন গত বৃহস্পতিবারের (১৩ মার্চ) তথ্য অনুযায়ী, এদিন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মী সবচেয়ে বেশি উপস্থিত ছিল সিলেট বিভাগে। সেদিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিল বিভাগটির ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কর্মী। সবচেয়ে কম ছিল রংপুরে। বিভাগটির ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ কর্মী সেদিন কর্মস্থলে হাজিরা দিয়েছে।
এছাড়া বরিশাল বিভাগে ৫৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫৭ দশমিক ৫৪, ঢাকায় ৫১ দশমিক ৭৪, খুলনায় ৫৯ দশমিক ৪১, ময়মনসিংহে ৫৮ দশমিক ৭৬ ও রাজশাহীতে ৪৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কর্মী উপস্থিত ছিল। ওইদিন সারা দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ৯২ হাজার ৫৫৩ স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ৪১ হাজার ৭২৪ জন বা ৪৫ শতাংশের কিছু বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্য খাত এমনিতেই কর্মী সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে হাসপাতালগুলোয় প্রায় অর্ধেক কর্মীই থাকে অনুপস্থিত। দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসক, নার্স এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুপস্থিতির সমস্যা কাটাতে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই সেভাবে কাজে আসেনি। সর্বশেষ শতভাগ হাজিরা নিশ্চিত করতে বেশির ভাগ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা চালু করা হয়।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি যতটুকু পারি চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতির বিষয়টি তদারকি করি। আমাদের এখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে উপস্থিতি নেয়া হয়। প্রতিদিন তো শতভাগ কর্মী উপস্থিতি পাওয়া সম্ভব না। ১০ শতাংশ কোনো না কোনো কারণে ছুটিতে থাকে। বাকি ৯০ শতাংশ উপস্থিত থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এবিএম আবু হানিফ বলেন, উপস্থিতির হার কম থাকার কথা না। অনেক প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক মেশিন নেই। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে মেশিনগুলো অকার্যকর। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে এখনো খাতায় হাজিরা লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া উপস্থিতি তদারকি করা হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে। তারা মূলত এসব জিনিস নজরে রাখেন। এছাড়া হাসপাতালগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা আছেন, তারা নিজেদের হাসপাতালে উপস্থিতি তদারকি করে থাকেন। তারা যদি কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, তখন জেলা বা বিভাগীয় পর্যায় থেকে তা তদারকি করা হয়। আমরাও অনেক ক্ষেত্রে বিষয়গুলো নজরে রাখি।
আপনার মতামত লিখুন :