জমির স্বল্পতা এবং ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ উৎসাহিত করতে গ্রুপভিত্তিক গৃহনির্মাণ ঋণের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ-সংক্রান্ত একটা প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে পাঠিয়েছেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
চিঠির অনুলিপি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রুপভিত্তিক জমি কেনা এবং গ্রুপভিত্তিক বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৩০ জন থেকে সর্বোচ্চ ৪০ জনে উন্নীত করা যেতে পারে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বিবেচনা ও সদয় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হলো।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে ঋণপ্রত্যাশীরা আবেদন করেছেন তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর জন্য। তাই ঋণ কার্যক্রম তাদের জন্য অধিকতর উপযোগী করতে গ্রুপভিত্তিক জমি কেনা ও বাড়ি নির্মাণ সহজ করা জরুরি। এজন্য গ্রুপভিত্তিক বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৩০ জন থেকে বাড়ানোর বাস্তব করেছেন।
রাজউকের নতুন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ডিএপি) অনুযায়ী বড় সাইজের প্লটে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে অধিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) পাওয়া যায়। তাই বড় সাইজের প্লটে বা জমিতে বড় গ্রুপে বাড়ি নির্মাণ সাশ্রয়ী হয়। এছাড়া জমির স্বল্পতা বিবেচনায় ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে বেশিসংখ্যক সদস্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরি করা হলে অল্প জমিতে অধিকসংখ্যক নাগরিক বসবাস করতে পারবেন এবং ঋণগ্রহীতারা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। এ কারণে গ্রুপের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর যৌক্তিকতা রয়েছে বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সম্মানজনক জীবনধারণের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা, ২০১৮ (সংশোধিত), পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা, ২০১৯ এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারকদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা, ২০২১ জারি করা হয়। বর্তমানে সরকারি গৃহনির্মাণ ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুসংখ্যক ঋণ নিয়েছেন।
উল্লেখ, নীতিমালাগুলোতে গ্রুপভিত্তিক জমি কেনাসহ বাড়ি নির্মাণ বা গ্রুপভিত্তিক বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা উল্লেখ নেই। তাই গ্রুপভিত্তিক বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদানসংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত ‘ওয়ার্কিং কমিটি’র ২০১৯ সালের ২৪ জুনের সভায় গ্রুপের সদস্যসংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০ জন নির্ধারণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে তৎকালীন সচিব এই সংখ্যা ১৫ জন নির্ধারণের অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে গ্রুপভিত্তিক বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রুপের সদস্যসংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০ জন হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
সরকারি চাকরিজীবীরা মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা হবে না) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহনির্মাণ ঋণ নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৬ বছর করা হয়েছে। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হন।
নীতিমালায় সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ঋণ ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ঋণের সুদ গড়ে ১০ শতাংশ ধরে বলা হচ্ছে, সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি অংশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ, অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেওয়া হবে না। এ ছাড়া কোনো ‘প্রসেসিং ফি’ বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ‘অতিরিক্ত ফি’ দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর।
তবে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকলে বা দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঋণের অযোগ্য হবেন। তবে ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজেদের অন্তত ১০ শতাংশ টাকা থাকতে হবে। তৈরি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের পুরো অর্থ এক কিস্তিতে ছাড় করবে ব্যাংক। তবে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ঋণের টাকা ছাড় করা হবে চার কিস্তিতে।
জাতীয় বেতনকাঠামোর পঞ্চম থেকে প্রথম ধাপে (গ্রেড) বেতন-ভাতা পাওয়া সরকারি কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরিতে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনায় ঋণের অঙ্ক হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
নবম থেকে ষষ্ঠ ধাপে বেতন-ভাতা পাওয়া কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ, জেলা সদরে ৫৫ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। দশম থেকে ত্রয়োদশ ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ, জেলা সদরে ৪০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ, জেলা সদরে ৩০ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। অষ্টাদশ থেকে বিংশতম ধাপের কর্মচারীরা পাবেন ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা, জেলা সদরে ২৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা ঋণ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর চাকরি আছে এমন সরকারি চাকরিজীবী বর্তমানে ৭ লাখ। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশকে ঋণ দেওয়া হলেও বছরে আবেদনকারী দাঁড়াবে ৭০ হাজার জন। গড়ে প্রতিজনের ঋণ ৪০ লাখ টাকা ধরলেও বছরে দাঁড়াবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকারকে বছরে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে।