এবারের ঈদযাত্রায় সড়কপথে গণপরিবহন চালাতে ডাকাতির ভয়ে আতঙ্কে আছেন বাস মালিকরা। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে রাতে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির আশঙ্কা বেশি।
গবেষণা ও সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য রোডের তথ্য মতে, গত আট মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে চার হাজার ৫০৫টি ছিনতাই এবং ২৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সড়কপথে এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই আর ১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৬৮ জন। এ ছাড়া ফুটপাত বা চলার পথে ৪৩২টি ছিনতাই ও ৩৫টি ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ১৭ জন আহত এবং একজন নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪৭৪। এর মধ্যে আন্তঃজেলা বাস প্রায় ২২ হাজার। অন্যদিকে, রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে প্রায় ১০ হাজার বাস।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে রাজধানী থেকে আন্তঃজেলায় একটি বাস দিনে অন্তত তিনটি করে ট্রিপ দেবে। দিনে ২ বার রাজধানী থেকে ছেড়ে যাবে আর একবার রাজধানীতে ফিরে আসবে। প্রতি ট্রিপে গড়ে ৪০ জন যাত্রী থাকলে ১০ হাজার বাসে দিনে আট লাখ যাত্রী বাসে করে গন্তব্যে যাবেন। তবে এবার বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের সময় ডাকাত আতঙ্ক নিয়েই যাত্রীসেবা দিতে হবে। আবার সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটলে ওই বাস পুলিশ জিম্মায় নিয়ে নেওয়া হয়। এতে করে দীর্ঘ সময় বাসটি আর সড়কে নামাতে পারেন না মালিক। যার ফলে বাস মালিক যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, চালক-সহকারীরাও বেকার হয়ে পড়েন।
সম্প্রতি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথের যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মহাসড়কে ডাকাতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই সভায় জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয়। বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীরা যেসব বাসে ওঠেন ওই বাসগুলো বেশি মাত্রায় ডাকাতির কবলে পড়ে। এ বিষয়ে সড়ক উপদেষ্টার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ওই মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা।
তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আসা এবং রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় চলাচল করা বাসেই বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব বাসে যাত্রীবেশে ডাকাতদলের সদস্যরা উঠে তাদের সহযোগীদের মোবাইলে তথ্য পাঠালে মহাসড়ক থেকে অন্য সহযোগীরাও বাসে উঠে পড়ে। এরপর ডাকাতদলের নির্ধারিত স্থানে বাস পৌঁছালে অস্ত্রের মুখে তারা ডাকাতি সেরে চলে যায়। ডাকাতরা দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি অস্ত্র দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করার পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি পর্যন্ত করছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে। টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সম্প্রতি হাইওয়ে পুলিশ স্পেশাল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর (০১৩২০-১৮২২০০) চালু হয়েছে। ইমারজেন্সি ঘটনা হলে যে কেউ এই নম্বরে ঘটনা জানাতে পারবেন। এতে করে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাড়া মিলবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রায় ডাকাতির মতো ঘটনা সবার জন্য বেদনার। ফলে যাত্রীসহ আমাদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশসহ আমরা কাজ করছি।
আপনার মতামত লিখুন :