বরগুনার আমতলীতে রমাজানে মাজারে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড নিয়ে স্হানীয় মুসুল্লিদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা পরিণত হয় ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা। মাজারে অগ্নি সংযোগ করা হলেও মাজারে থাকা কোরআন শরীফ রয়ে গেছে অক্ষত।
ঘটনাটি শুক্রবার রাত সোয়া ১২ টার দিকে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বটতলা নামক এলাকায় ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মাজারের বাৎসরিক ওরশ চলাকালে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এতে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুইটি বৈঠকখানা পুড়ে চাই হয়ে গেছে এবং হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ মাজার স্থাপন করা হয়। মাজারের সঙ্গেই উত্তর পাশে রয়েছে আল আকসা মসজিদ। রাতে তারাবীহ নামাজ চলাকালে মাজার কর্তৃপক্ষ দুইদিন ব্যাপী ওরশ উৎযাপনের আয়োজন করে। নামাজ শেষে মসজিদের মুসুল্লিরা দেখে মাজারে নারীরা সিজদাহ্ দিচ্ছে এবং গান বাজনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক এসে মাজার পুজা ও গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপরগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্য দ্বন্ধ হয়।
এক পর্যায়ে রাত ১২ টার সময় তৌহিদী জনতা লাঠি সোটা নিয়ে মাজার ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। এনিয়ে এলাকা জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এলাকার শত শত মানুষ ঘুম থেকে ওঠে বাহিরে বের হয়ে আসে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে মাজারের দুইটি বৈঠকখানা ও মাজারের মধ্যে সামিয়ানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে আসেন। পরবর্তীতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোঃ মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিম (২৭)। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, `মাওলানা ওমর ফারুকসহ বেশ কিছু সমর্থক গিয়ে মাজারে খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে পবিত্র রমজান মাসে মাজার পুজা ও গানবাজনা করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এক পর্যায় তার ভক্তবৃন্দ ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তুলে। এই ঘটনা আমতলীতে ছড়িয়ে পরলে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজার ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।`
এবিষয়ে মাজারের খাদেম ও পীর এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
আমতলী উপজেলা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, মাজারে হামলার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। যারাই এই ঘটনা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আছে। আমি আমতলী পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ঘটনা স্হলে ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল সংরক্ষণ ও উদ্ধারের নির্দেশনা দিয়েছি।
যাযাদি/এস
আপনার মতামত লিখুন :