ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

জামালপুরের সেই নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ ওএসডি

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ১০:১১ এএম
ছবি: সুলতান মাহমুদ

দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রূপালী বাংলাদেশে সংবাদ প্রকাশের জেরে ওএসডি হয়েছেন জামালপুরের সেই নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ। এর আগে রূপালী বাংলাদেশ গত ২ মার্চ ‘বিশ্ব ব্যাংকের ১৮৮২ কোটি টাকার প্রকল্পে হরিলুট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এরপর প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গত রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব হাসান হাবিব স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, সুলতান মাহমুদকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ডিপিএইচই) সংযুক্ত করা হয়েছে। 

রূপালী বাংলাদেশে প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের কুমিল্লা ও জামালপুর জেলার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, জামালপুরে প্রায় ৩ কোটি টাকা বেশিতে কাজটি দ্বিতীয় লোয়েস্টকে দিয়ে ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন হয়। 

সংবাদটি প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন, সেই বৈঠকে জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত আসে। গত রোববার সুলতান মাহমুদকে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করলেও বিশ্বব্যাংকের ১৮৮২ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে হরিলুটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এই চক্রের আরেক সদস্য কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসরুল্লা। তিনি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। মো. নাসরুল্লার বিষয়টিও তদন্তাধীন বলে মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এলজিআরডি উপদেষ্টার বাড়ি কুমিল্লায় হওয়ায় তাকেও ম্যানেজ করেছেন এই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী।  তবে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন টিম। 

প্রসঙ্গত, প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশের ৩০টি জেলায় পাইপলাইন স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজে ১ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। 

দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানির সেবায় বিশ্বব্যাংকের সহায়কপুষ্ট এই প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান, জামালপুর এবং কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ পড়লে দুদক তদন্তে নামে এবং বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। 

ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া প্রথম দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা পঞ্চম লোয়েস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা ছিলেন। সেই সুবাধে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তাদের বিশেষ সুবিধা দিতেন। ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন। কাজ না করে ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকার বিল প্রদান করার অভিযোগও পাওয়া যায়।