ঢাকা বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

সাবেক শিবির নেতাদের নতুন দল : উত্থান হতে পারে ইসলামপন্থীদের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
সাবেক শিবির নেতাদের নতুন দল : উত্থান হতে পারে ইসলামপন্থীদের

দেশের রাজনীতিতে নতুন আরেকটি দল আসছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা। 

ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এই নেতারা নতুন দলটি গঠনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে চান। তাদের এই উদ্যোগের কারণ এবং তারা কী উদ্দেশ্যে কাজ করবে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। 

তবে, অনেকে মনে করছেন— তারা নিজেদের পরিচয়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে, যা রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে।

নতুন সংগঠনের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলী আহসান জুনায়েদ, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। 

সম্প্রতি, একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের কথা প্রকাশ করেছেন। 

তিনি জানিয়েছেন, এই নতুন সংগঠনটির লক্ষ্য হবে জুলাই আন্দোলনের চেতনা বজায় রাখা এবং একটি শক্তিশালী ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করা।

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই যা দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। 

আমাদের মূল লক্ষ্য হবে জুলাই আন্দোলনের দাবিগুলোকে সামনে রেখে কাজ করা। 

তিনি আরও বলেন, নতুন এই সংগঠনটি বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে, যার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীরা, পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজের মানুষও অংশ নেবেন।

নতুন সংগঠনটি গঠনে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব নেতা-নেত্রী যুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে স্থান পাননি। 

তাদের মতে— শিবির সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে এনসিপিতে স্থান না পেয়ে, তারা নতুন একটি সংগঠন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 তবে, তাদের এই নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিবিরের পুরনো নেতা-নেত্রীরা নিজেদের পরিচয় পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন। তাদের মতে— শিবিরের নামকরণ কখনো কখনো তাদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এবং এখন তারা নিজেদের পরিচয়ে একটি পরিবর্তন আনতে চাইছেন, যেন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। 

অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে শিবিরের প্রভাব ও আদর্শ আরও শক্তিশালী হতে পারে।

আলী আহসান জুনায়েদ এবং তার সহযোগীরা বলেছেন, তাদের নতুন সংগঠন শুধু ‘জুলাই আন্দোলনের দাবিগুলোর’ ওপর ভিত্তি করে কাজ করবে না, বরং আরও বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে। 

তাদের দাবি—তারা দেশের রাজনীতিতে একটি দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও সাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে বিশ্বাসী।

এছাড়া, জুনায়েদ বলেছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং দেশে সব নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখা। 

তিনি আরও জানিয়েছেন, তারা এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চান, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকবে এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত হবে।

নতুন সংগঠনটি শুরু থেকেই নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমর্থন পেতে শুরু করেছে। 

আলী আহসান জুনায়েদ জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মাদরাসার শিক্ষার্থী, আন্দোলনের নারী নেত্রী, শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিরা—এই সকল মানুষকে একত্রিত করা হবে। 

তারা মনে করছেন, এই প্ল্যাটফর্মটি দেশে একটি বৃহৎ পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে সক্ষম হবে।

তারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের সংগঠনটির সদস্যরা শুধু শিবিরের সাবেক নেতারা নন, বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক পটভূমি থেকে আসা নতুন মুখও এতে অংশ নেবেন। 

এর মাধ্যমে, তারা দেশের রাজনীতিতে একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবেন এবং রাজনৈতিক দলের প্রচলিত কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে চান।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন প্ল্যাটফর্মটির উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। 

এনসিপির জ্যেষ্ঠ নেতা আরিফুল ইসলাম আদিব বলেছেন, ‘তারা তরুণদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে, এবং তরুণদের যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্যোগকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কোনো কারণ নেই।’ 

এনসিপি মনে করে— এই নতুন সংগঠনটি দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এটি এনসিপির বিকল্প হতে পারবে না।

এছাড়া, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘এই নতুন প্ল্যাটফর্ম একটি ভালো উদ্যোগ, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক ধারা আলাদা।’ 

তিনি আরও জানান, এনসিপির মতো সংগঠনগুলোর জন্য এটি কোনো সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নতুন সংগঠনটির মাধ্যমে ইসলামী রাজনৈতিক আদর্শের পুনরুত্থান হতে পারে বলে মনে করছেন।

 বিশেষ করে, ২৪ জানুয়ারির গণ-অভ্যুত্থান এবং শিবিরের নেতৃত্বে ইসলামপন্থীদের যে উত্থান ঘটেছিল, তা এই নতুন সংগঠনটির মধ্যে আরও শক্তিশালী হতে পারে। 

তবে, শিবিরের নামকরণ নিয়ে কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, কিন্তু জুনায়েদ ও তার সহযোগীরা শিবিরের পুরনো পরিচয় থেকে বের হয়ে নতুন পরিচয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।

সামিয়া জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 

তিনি বলেন, ‘এই নতুন প্ল্যাটফর্মটি কোনোভাবেই শিবিরের প্রভাবমুক্ত নয়, তবে তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়ে একটি পরিবর্তন আনতে চাইছে।’

এনসিপি নেতারা মনে করেন, শিবিরের সাবেক নেতারা নতুন দলের শীর্ষ পদগুলো নিয়ে যে সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন, তা কোনো বাধা নয়। 

তারা মনে করেন, নতুন সংগঠনটি এনসিপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বিকল্প হতে পারবে না।

তবে, রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন— সময়ই বলে দেবে, নতুন সংগঠনটি কতটা সফল হতে পারবে। 

তাদের উচিত নিজেদের পরিচিতি পরিষ্কার করা এবং জনগণের মধ্যে এক ধরনের আস্থা তৈরি করা, যাতে তারা কার্যকরীভাবে দেশের জন্য কাজ করতে পারে। সূত্র: বিবিসি