চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে অন্তত ৬৮ লাখ টন গম আমদানির প্রয়োজন পড়বে বলে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এছাড়া পর পর দুটি বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দেশে চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন। সে হিসেবে রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও চলতি অর্থবছরে সর্বমোট চাল ও গম আমদানির প্রয়োজন পড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি।
গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্য দুটি আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ টনের বেশি। এ অনুযায়ী বাকি তিন মাসে আমদানি করতে হবে ৩২ লাখ টন। ইউএসডিএর পরিসংখ্যানকে আমলে নিয়ে অত্যন্ত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করতে গেলেও অর্থবছরের বাকি সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে। বন্যায় উৎপাদন হ্রাসের প্রেক্ষাপটে বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং খোলাবাজারে চাল বিক্রিসহ সরকারের খাদ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো নির্বিঘ্ন রাখতে এ পরিমাণ আমদানির বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আরেক পূর্বাভাসে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৬ লাখ টন চাল ও গম আমদানির প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছিল।
সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশের আমদানির ৮০ শতাংশই মূলত গম। কিছু চাল ও ভুট্টা আমদানির প্রয়োজন পড়ে। সে হিসেবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানি প্রয়োজন পড়ার কথা সাড়ে চার লাখ টন। আর গম আমদানির প্রয়োজন পড়ার কথা প্রায় ৬১ লাখ টন।
বিশ্লেষকরা জানান, সরকারের চালের বর্তমান মজুত পর্যাপ্ত না। প্রয়োজনের তুলনায় কম আমদানির পরিমাণ। তা ছাড়া আমন ও বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি এ সময়ে খাদ্যশস্যের এমনিতেও দাম কিছুটা বেড়ে যায়। বর্তমানে কম উৎপাদন ও আমদানির সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বড় মিলারদের বিরুদ্ধে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দর অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ উঠছে। এ অবস্থায় আমদানি না বাড়ালে চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে খাদ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার টন। যার মধ্যে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার টন। গম আমদানি হয়েছে ৪৩ লাখ ৪২ হাজার টন। যার মধ্যে বেসরকারিভাবেই আমদানি করা হয়েছে ৪১ লাখ টনের বেশি। তবে গত অর্থবছরে দেশে কোনো চাল আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। তবে সে বছর দেশে ৬৬ লাখ টন গম আমদানি হয়েছিল।
এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৬ লাখ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ। ফলে সরকারের চালের মজুদ সাড়ে ৯ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। যা পর্যাপ্ত না। খোলাবাজারে বিক্রির জন্য আরও চালের প্রয়োজন পড়বে। তাই সরকারের দ্রুত আরও ৫ লাখ টন চাল আমদানি করা প্রয়োজন। বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমেছে। তবে আমন ও বোরোর মাঝামাঝি এ সময়ে চালের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এবার উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত কম। আমনের উৎপাদন দেড় কোটি টনের বেশি হয়নি। ফলে বড় মিলাররা এ কম উৎপাদনের সুযোগ নিচ্ছে। বোরোর ফলন ভালো হলে দাম কমে আসতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এবার আমন মৌসুমে ফলন হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ টন। চলতি আমন মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ছাপান্ন লাখ হেক্টর। দেশে গত অর্থবছরে আমন মৌসুমে রেকর্ড এক কোটি ৬৬ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছিল।
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, আমনের উৎপাদন কোনোভাবেই দেড় কোটি টন ছাড়ানো সম্ভব না।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বাজার স্বাভাবিক করতে আরও ৫-৬ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। বোরো ফলনে কোনো সমস্যা হলে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সেটা আমরা বোরোর ফলন দেখে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের ৭০ লাখ টন গম লাগে। সেখানে বেসরকারি খাতই প্রায় পুরোটা আমদানি করে থাকে। সরকারিভাবে যতটা করার সেটা আমরা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :