জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ১০০ মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, হামলা-ভাঙচুর, মারধর, অগ্নিসংযোগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ করা হয়েছে।
৫ আগস্টের পর থেকে দায়ের করা এসব মামলায় লক্ষাধিক আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২ লাখ। মামলা দায়েরের সাত মাস পর্যন্ত সারা দেশে আনুমানিক ১০ হাজার আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৫০০ আসামি বিভিন্ন মেয়াদে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রিমান্ড শেষে মাত্র একটি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।
রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা একটি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর গত ৯ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় জাতীয়তাবাদী ঘাট শ্রমিক দল ইউনিয়নের (রেজি নং-৩৮০৮) সভাপতি মনির হোসেন বাদী হয়ে ১৪ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মারধর, চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলা করেন। কোতোয়ালি থানার সাব-ইন্সপেক্টর মহিউদ্দিন জুয়েল মামলাটি তদন্ত করেন। ৬ মাস ধরে তদন্ত শেষে গত ১৩ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিট দাখিলকারী তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিউদ্দিন জুয়েল বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৯ জনের বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সেই অনুযায়ী আমি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
মামলার বাদী মনির হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে ৩ আগস্ট সদরঘাট এলাকার ওয়াইজঘাটে ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মীসহ মিছিল বের করার সময় ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জাবেল হোসেন পাপন তার কপালের দিকে পিস্তল তাক করে মিছিল বন্ধ করতে বলে। ঐ সময় যুবলীগের আরও অনেক নেতাকর্মী আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এলাকায় থাকতে হলে তাদের ২০ লাখ টাকা দিতে হবে।
আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে যে ২৯ জনের নাম দেওয়া হয়েছে তারা সবাই কোতোয়ালি থানা এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এদের মধ্যে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজি, সদরঘাট এলাকার গ্রেটওয়াল শপিং সেন্টারের মালিক জাবেদ হোসেন মিঠু, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রিপন বেপারি, ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শহিদ, সাধারণ সম্পাদক সৈকত হোসেন উল্লেখযোগ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলার অনেক মামলার ক্ষেত্রে ঘটনা সম্পর্কে আসামিদের সিংহভাগ কিছুই জানেন না। বাদী চেনেন না আসামিকে, আসামিরাও চেনেন না বাদীকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদী নিজেও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনও অভিযোগ উঠেছে, শত শত মানুষকে আসামি করে মামলা দিতে বাদীকে বাধ্য করা হয়েছে, কখনো দেখানো হয়েছে টাকার প্রলোভনও।
পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককেই আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। মামলায় কাদের আসামি করা হবে, সেক্ষেত্রে বাদীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ থাকে অন্যদের হাতে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীসহ সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে, ঢালাও মামলা ও নিরপরাধ লোকজনকে আসামি করার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশের থানাগুলোতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলো তদন্ত করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। নিরপরাধ একজন ব্যক্তিকেও যেন মামলায় আসামি করা না হয়।
আপনার মতামত লিখুন :