র‍্যাব বিলুপ্তি ও ডিজিএফআইকে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম

র‍্যাব বিলুপ্তি ও ডিজিএফআইকে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।

একই সঙ্গে ডিজিএফআইয়ের কার্যক্রম সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতায় সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাবও করেছে সংস্থাটি।

সেই সঙ্গে বিজিবিকে সীমান্তসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কিছুতে যুক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবিতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, এইচআরএফবির প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ও স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপম্যান্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন আইন এবং বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জুলাই-আগস্টের সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি এ সহিংসতায় আহতদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কার্যকর পুনর্বাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নিরাময়ের জন্য সত্য প্রকাশ প্রক্রিয়া শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।’


এতে আরও বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, এগুলোর মধ্য রয়েছে- মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ সংরক্ষণ ও ধ্বংস বা লুকানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, ভুক্তভোগীকেন্দ্রিক ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা, সামরিক ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ক্ষেত্রে নিয়মিত আদালতে বিচার নিশ্চিত করা,  নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা, বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ ও জনবল, বিচারকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ করা।

এছাড়াও মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া এবং তা সম্পূর্ণ বাতিলের দিকে অগ্রসর হওয়া, গুমসংক্রান্ত জাতীয় কমিশনকে সহায়তা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ সরবরাহ করা,  আটকের সমস্ত গোপন স্থান সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করা, বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানগুলিকে সংশোধন করা। পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ধাতব (প্রাণঘাতী) গুলি দেওয়া কমিয়ে দেওয়া, নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার ও ভুয়া মামলার প্রবণতা বন্ধ করা, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলক আদেশ জারি এবং প্রয়োগ করা, নাগরিক সমাজসহ সরকার, বিরোধী দল এবং স্বাধীন সদস্যদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করা যার নেতৃত্বে একটি ন্যায্য স্বচ্ছ এবং যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি এবং অপসারণ প্রক্রিয়া চালু করা।

পাশাপাশি একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশনের মাধ্যমে পুলিশ, গোয়েন্দা, বিজিবি, আনসার ভিডিপি এবং সশস্ত্র বাহিনীর যেসব কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের পদ থেকে অপসারণ করা, জাতিসংঘ শান্তি মিশন বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিশনে নিয়োজিত কোনো বাংলাদেশীকর্মী যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, মানবিক বা শরণার্থী আইন লঙ্ঘন বা যৌন হয়রানি বা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর এবং শক্তিশালী স্বাধীন মানবাধিকার স্ক্রিনিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বলা হয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক বন্ধ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্য (নিবারণ) আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করে এমন নিপীড়ন বা দমনমূলক আইনসমূহ সংশোধন, এবং সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সরকারের উচিত এসব সুপারিশ বাস্তবায়নেরে উদ্দেশ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একইসঙ্গে, দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন আইনি এবং বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জুলাই-আগস্টের সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, এ সহিংসতায় আহতদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কার্যকর পুনর্বাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নিরাময়ের জন্য সত্য প্রকাশ প্রক্রিয়া শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।

আরবি/ফিজ

Link copied!