মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবের

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৫, ১১:২৫ এএম

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবের

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ৪০০ জন এমএনএ বা এমপিএ‍‍’র বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না। তাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পরিবর্তিত হবে।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।  

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কেবল তাদেরই হবে, যারা রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। অন্যরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে গণ্য হবেন। তবে এতে কারও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে না এবং সবার সুবিধা ও সুযোগ সমান থাকবে।’

প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়া অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতিবিদই নন আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। 

এই চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধারা হলেন– ১. যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন  ২. যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূতসহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক ৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি অনেকেই বুঝতে ভুল করছেন। মুক্তিযুদ্ধে যিনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি সেভাবেই স্বীকৃতি পাবেন। 

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানান,খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় প্রথমে বীরাঙ্গনা এবং সীমান্তবর্তী ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের চিকিৎসক ও নার্সদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, চূড়ান্ত খসড়ায় তাদের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা জানান, ‘‘তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকবে।’’

উপদেষ্টা আরও বলেন, খসড়াটি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা ইতিহাসের সত্য জানি। কোনো আইন পরিবর্তন করে কারও অবদান বদলে দেওয়া যাবে না। এসব অপ্রয়োজনীয় ও অপচয়মূলক কাজ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত, তাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয় তাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ তিনি এই বিষয়েও বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার না করে বরং দেশের অর্থনীতির দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’’

মানবাধিকার নেত্রী এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। এটি কেবল কনভেনশনাল সামরিক যুদ্ধ ছিল না। এর অন্যতম মূল অংশ ছিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক।’’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘সে সময়ের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ভুলত্রুটি সংশোধন করা উচিত, তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন এমএনএ বা এমপিএ, গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা মহল চেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা সেই প্রচেষ্টারই অংশ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা ছিল পরিকল্পিত সংগ্রাম, রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে জনগণ এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। তাই এ নিয়ে বিতর্ক তোলা ঠিক নয়।’’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘‘বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝা দরকার।’’

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, ‘‘আশা করি, মুক্তিযোদ্ধাদের আর নতুন করে হয়রানি করা হবে না। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসে একটি মীমাংসিত সত্য, তাই এ বিষয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ নেই।’’

সূত্র: সমকাল 

আরবি/শিতি

Link copied!