দেশে সামগ্রিক অপরাধ ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা, অপহরণের মতো ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। খুনও বেড়েছে কিছুটা। তবে ধর্ষণ, চুরি ও সিঁধেল চুরির মতো অপরাধ কমেছে। গত সাত মাসে উল্লেখিত সাত ধরনের অপরাধের ঘটনায় সারা দেশের মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সাত ধরনের ১৩ হাজার ৪৯৬টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালের একই সময়ে এই সাত ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১২ হাজার ৭১৪টি। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অপরাধ ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে ছিনতাই বা ডাকাতি, দস্যুতা, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, চুরি ও সিঁধেল চুরি—এই সাত ধরনের অপরাধের ঘটনা নিয়ে বেশি উদ্বেগ দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এ অবস্থায় ডাকাতি ও দস্যুতা মামলার পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনেও মামলা হচ্ছে। তবে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা বাড়লেও দ্রুত বিচার আইনের এ মামলা কমেছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে ৩০৬টি মামলা হয়। ২০২১-২২ সালে একই সময়ে এ মামলার সংখ্যা ছিল ২২১, ২০২২-২৩ সালে মামলা ছিল ২৫৩টি, ২০২৩-২৪ সালে একই সময়ে এ মামলা হয় ২২৯টি এবং গত ছয় মাসে এই মামলা হয়েছে ১৮১টি। অর্থাৎ বিগত পাঁচ বছরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলার সংখ্যা এখন সবচেয়ে কম।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যে পুলিশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা এবং পুলিশের আইনি নির্দেশনা না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এটাকেও সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। এ জন্য এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা অপরাধ করলেই মামলা হবে, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। সারা দেশের পুলিশকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইজিপি বলেন, তবে কিছু কিছু অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। আবার আগের অপরাধের অনেক মামলা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে হয়েছে, এ কারণেও খুনসহ মামলার সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিটি অপরাধের কারণ বের করা এবং পৃথক ধরনের অপরাধের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের কাছে সংরক্ষিত মামলার তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডাকাতি হয়েছে ৪২৬টি, যা বিগত বছরে একই সময়ে ছিল ১৮২টি। অর্থাৎ ডাকাতি ১৩৪ শতাংশ বেড়েছে। গত সাত মাসে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৩৮টি, যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ৭৩৫টি। অর্থাৎ দস্যুতা ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
সর্বশেষ দুই মাসে সারা দেশে ১৪৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬২টি। গত দুই মাসে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে ৪২২টি। গত বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দস্যুতার ঘটনা ঘটে ২৩৫টি।
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের ধরন অনুযায়ী কখনো ডাকাতি ও কখনো দস্যুতার মামলা হয়েছে। প্রচলিত আইনে দস্যুতার ক্ষেত্রে অপরাধীর সংখ্যা এক থেকে চারজন হয়ে থাকে। আর চারজনের বেশি ব্যক্তি দস্যুতার অপরাধে জড়ালে তা ডাকাতি হিসেবে গণ্য হয়।
আপনার মতামত লিখুন :