ঈদেও যাত্রী খরার শঙ্কা লঞ্চ মালিকদের

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ১১:১৭ এএম

ঈদেও যাত্রী খরার শঙ্কা লঞ্চ মালিকদের

ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হচ্ছে ২৫ মার্চ। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস থাকবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবার ঈদেও যাত্রী খরার শঙ্কায় লঞ্চ মালিকরা। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে নৌপথের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ কমছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে, ঈদ সামনে রেখে লক্কড়ঝক্কড় ও পুরোনো লঞ্চগুলো কিছুটা সংস্কার ও রং করে যাত্রী আনা-নেওয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক রয়েছে প্রশাসন।

কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। নৌপথে যাত্রা নিরাপদ করতে সরকার ঈদুল ফিতরে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল করলে রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

গত দু’দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীর তেমন ভিড় নেই। বিকেলের দিকে বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের আসতে দেখা যায়। ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার অন্য সব যানবাহনে ভিড় থাকলেও সদরঘাটের চিত্র ভিন্ন। তবে ২৫ রোজার পর লঞ্চে যাত্রী বাড়বে বলে আশাবাদী মালিকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চযাত্রী অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মহাসড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন নদীর ওপর সেতু হওয়া এবং সদরঘাটমুখী সড়কে তীব্র যানজটের ভোগান্তির কারণে লোকজন এখন লঞ্চে তেমন একটা যাতায়াত করতে চান না। বরিশাল, ভাণ্ডারিয়া ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চ যাত্রী একেবারেই কমে গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ১৮টি লঞ্চ চললেও এখন চারটিতে নেমে এসেছে। কখনও কখনও একটি মাত্র লঞ্চ চলে। তবে চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাসন, লালমোহন ও বরগুনা রুটে লঞ্চ তেমন কমেনি।

লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগে ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌপথে ২২৫টির মতো লঞ্চ চলাচল করত। এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০। যাত্রী সংকটে কমেছে নৌপথও। এখন রুট ৩৫টি। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলে বিভিন্ন পথে।

আগামী ২৫ মার্চ ঈদুল ফিতরের বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে যাত্রীর ভিড় কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছেন মালিকরা। তারা বলছেন, আগে ঈদ এলে যাত্রীর চাপ সামলাতে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসে অতিরিক্ত লঞ্চ যুক্ত করা হতো। গত কয়েক বছর ধরে যাত্রী খরার কারণে অলস বসে থাকা লঞ্চগুলোকেই ঈদের সময় চালু রাখা হয়। ঢাকা-বরিশাল রুটে ১৮টি লঞ্চ রয়েছে। অন্য সময় সব না চললেও ঈদের সময় চালু রাখা হবে। অন্য নৌরুটগুলোতেও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে কোনো কোনো লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি মানালীর অগ্রিম টিকিট ১৫ রমজান থেকেই বিক্রি হচ্ছে।

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেছেন, আগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ৩৫ শতাংশ নৌপথে যেতেন। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এখন তা প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

এদিকে, রোজা শুরুর আগেই কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে পুরোনো লঞ্চগুলো নতুন সাজে সাজানো হয়েছে।

কয়েকজন লঞ্চ মালিক জানান, ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ সংস্কার করা হয়েছে। অধিকাংশ লঞ্চে সাধারণত ঈদের সময় নতুন করে রং করা হয়। তবে এবার পুরোনো লঞ্চগুলোকে ঈদে চালানোর বিষয়ে কঠোর নজরদারি রেখেছে লঞ্চ মালিক সমিতি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

নৌ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দু’দফা বৈঠক করে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায়ই ফিটনেসবিহীন কোনো জলযান চলাচল করতে পারবে না। কোনো লঞ্চ বা ফেরি সিরিয়াল ভঙ্গ করে চলতে পারবে না। নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় কঠোরভাবে নজরদারি করবে।

এবারও নৌ মন্ত্রণালয় থেকে ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী বহনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দায়ীদের শুধু জরিমানাই নয়, লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, নৌপথে যাত্রী খরার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য সময়ের লোকসান পোষাতে ও যাত্রী ধরে রাখতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অনেক কম নিয়ে থাকেন তারা। ঈদের মৌসুমেই কেবল নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের সুযোগ পান। সেটাও তুলনামূলক অপ্রতুল। জ্বালানি তেলের মূল্য, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে নির্ধারিত ভাড়া নিয়েও ক্ষতি পোষানো যায় না। তাই ভাড়া অল্প বাড়িয়ে দেওয়া হলে তারা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রীসেবা দিতে পারতেন। 

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যুক্ত হচ্ছে এমভি এমখান নামের একটি অত্যাধুনিক নতুন লঞ্চ। লঞ্চ মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক হান্নান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ঈদ উপলক্ষে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখনও ঘাটে যাত্রীর ভিড় নেই। ২৫ রোজার পর যাত্রী বাড়বে বলে আশা করছি। যাত্রীদের বিলাসবহুল যাত্রার জন্য এবার একটি অত্যাধুনিক লঞ্চ যুক্ত হবে।’

আরবি/এসআর

Link copied!