পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আনুমানিক পৌণে দুই কোটি (এক কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার) মানুষ বৃহত্তর ঢাকা ছাড়বে। তারা ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ৬০ শতাংশ যাবে সড়কপথে। বাকি ৪০ শতাংশ নৌ ও রেলপথে যাবে। এই হিসেবে, এবার সড়কপথে ঈদযাত্রী সংখ্যা মোট এক কোটি তিন লাখ ৬২ হাজার।
নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) ঈদপূর্ব যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
রোববার (২৩ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পর্যবেক্ষণের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, সড়কে এবারো জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্তসমূহ ও নির্দেশনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতীয় কমিটি ও এসসিআরএফ।
সর্বশেষ জনশুমারি ও অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগের জনসংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি; এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বাস করে দুই কোটি।
দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানা গাজীপুরে হওয়ায় ওই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। আর নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বাস করে ৩০ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে তিন মহানগরের জনসংখ্যা তিন কোটি পাঁচ লাখ।
এ ছাড়া এই তিন জেলায় আরও প্রায় ৫৫ লাখ এবং মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় ৪৬ লাখ মানুষের বসবাস। অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশনগুলোর বাইরে এই পাঁচ জেলার জনসংখ্যা এক কোটি এক লাখ। মূলত: বৃহত্তর ঢাকার এসব জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঈদে স্বজনদের কাছে যায়।
গবেষক সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও পরিবহন বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ও এসসিআরএফ জানায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এসব জনবহুল শিল্প ও বাণিজ্য শহরের ৫০ শতাংশ এবং জেলার অন্যান্য স্থানের ২০ শতাংশ মানুষ আবাসস্থল ছেড়ে যায়। এই হিসেবে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের এক কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার (জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ) মানুষ বাড়ি যাবে।
উল্লেখিত পাঁচ জেলার অন্যান্য স্থান থেকে যাবে আরও ২০ লাখ ২০ হাজার (জনসংখ্যার ২০ শতাংশ)। সব মিলিয়ে এক কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ কিছুদিনের জন্য বৃহত্তর ঢাকা ছেড়ে যাবে; যার মধ্যে সড়কপথে যাবে এক কোটি তিন লাখ ৬২ হাজার (ঈদযাত্রীর ৬০ শতাংশ)।
যদিও প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য ‘শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে’ বলে স্বীকার করেছে সংগঠন দুটি। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, “সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোতে এ-সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার না থাকায় সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া খুব কঠিন”।
তবে এসসিআরএফ সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, “পরিসংখ্যান শতভাগ সঠিক না হলেও খুব বেশি হেরফের হবে না।”
যৌথ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিপুলসংখ্যক মানুষকে মাত্র এক সপ্তাহে সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার সক্ষমতা সড়ক পরিবহন খাতে নেই। দূরপাল্লার অনেক সড়কের কোনো কোনো স্থানের এখনো বেহাল দশা। সারা দেশে সড়কে পাঁচ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কগুলোতে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানসহ হাজার হাজার মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে। সড়ক-মহাসড়কের অনেক স্থানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হয়।
এছাড়া পরিবহন স্বল্পতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ চালক, সড়ক-মহাসড়কে দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাব রয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট, বাসের সময়সূচি বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে ‘সরকারের আগাম গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ ইতিবাচক’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার নির্বিঘ্ন ঈদ-যাতায়াতের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলকে কঠোর নির্দেশনাও দিয়েছে। সরকারের নির্দেশনা কার্যকর হলে জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনা কমবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।