বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেন-বাসে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ০১:৪৩ এএম

ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেন-বাসে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঈদের ছুটি এখনো শুরু না হলেও গতকাল সোমবার থেকে ট্রেন-বাসে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। শুরুর দিনই ট্রেন-বাসে ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকে প্রতিটি ট্রেন ও বাসে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদযাত্রার শেষদিকে এই ভিড় আরও বাড়তে পারে তাই ভোগান্তি এড়াতে রাজধানীতে কর্মজীবী মানুষের পরিবার-পরিজনকে আগেভাগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে মানুষজন ঘরমুখো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানীও। 

গতকাল সকাল ৬টা থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরু হয়। সকালে স্বাভাবিক অবস্থা থাকলেও বেলা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। 

গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ব্যাপক জটলা। এবারও বিগত দিনের মতো টিকিটবিহীন কোনো যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই ভিড় থাকলেও প্ল্যাটফর্মে অনেকটা স্বস্তিতে আছেন টিকিটধারী যাত্রীরা। খুব বেশি ঝামেলা ছাড়াই ভালোভাবে ট্রেনে উঠতেও পারছেন তারা।

জামালপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী শাহান আরা বলেন, শেষের দিকে ভিড় হতে পারে, এ জন্য বাচ্চাকাচ্চা ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে আগেভাগেই চলে যাচ্ছি। আজকেও ভিড় আছে কিছুটা, তবে সেটা খুব সমস্যা তৈরি করছে না। যেহেতু টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, এজন্য যাত্রী ছাড়া অন্য কোনো বাড়তি লোকজন নেই। আমার আগেও যারা গেছেন, তারাও ভালোভাবে ট্রেনে উঠতে পেরেছেন।

সিলেটে যাওয়ার জন্য পরিবারকে পারাবত এক্সপ্রেসে ট্রেনে তুলে দিতে স্টেশনে এসেছিলেন একটি প্রাইভেট কোম্পানির কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের অফিস ছুটি হবে বৃহস্পতিবার। ওইদিন রাতে আমি বাড়ি যাব। তবে সন্তানের স্কুলের কোচিংয়ের ছুটি হয়ে যাওয়ায় পরিবারকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। শেষ সময়ে ভোগান্তি বাড়তে পারে তাই সেই আগেভাগেই পাঠিয়ে দিলাম। 

এদিকে টিকিটবিহীন যাত্রী বা কোনো অনাকাক্সিক্ষত লোক যাতে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের চেকিং হচ্ছে।  প্রথমে পার্কিং এরিয়ায় টিকিট চেকিং করা হয়। টিকিট ছাড়া যদি কেউ চলে আসে, সেক্ষেত্রে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় চেকিং হচ্ছে টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে। আর সর্বশেষ চেকিং হয় প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে।  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে রেলস্টেশনে পুলিশ, র‌্যাব ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আছেন।

ঈদযাত্রা নিয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, ট্রেনে ঈদের যাত্রা শুরু হলো। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ বেশি। তবে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক, নিরাপদ এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া আছে। গতকাল সারা দিনে মোট ৪৩টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২৫টি মেইল ও কমিউটার ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

প্রথম দিনই ট্রেনের শিডিউল নড়বড়ে

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় চলা ট্রেনগুলোর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন লম্বা বিলম্বের শিকার হয়েছে। ট্রেন দুটি হচ্ছে- কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতী এক্সপ্রেস (৭৩৭) ও লালমনিরহাটগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯)। এ ছাড়া বাকি ট্রেনগুলো কিছুটা বিলম্ব ছাড়ছে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, এগারসিন্দুর প্রভাতী এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ৭টা ৫৫ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে। বুড়িমারী এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ২ ঘণ্টা বিলম্বের সকাল ১০টায় ঢাকা ছেড়ে যায়। 

এ ছাড়া জামালপুর এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ২৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায়। একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টার পরে ছেড়ে যায়।

সড়কপথে চাপ কম : সড়ক পথের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। তবে এখনো নেই যাত্রীচাপ। সকাল থেকেই রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা যায় প্রতিদিনকার নিয়মিত চিত্র। যাত্রী অপেক্ষায় মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলো। যে কয়জন যাত্রী আসছেন তাদের নিয়েই ছাড়তে হচ্ছে গাড়ি। ফাঁকা থাকছে বেশিরভাগ আসন। এরমধ্যে যারা যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

গাবলতী বাস কাউন্টারে কথা হলে কয়েকটি বাস কাউন্টারের কর্মচারী বলেন, লম্বা ছুটির কারণেই এবার যাত্রী খরা। তবে তাদের আশা দুই দিন পর থেকে কিছুটা বাড়তে পারে যাত্রীচাপ।

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া নিলেই ব্যবস্থা: ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম। তিনি বলেছেন, ঈদযাত্রায় যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ ছাড়া ঈদকে ঘিরে কোনো বাস কাউন্টার বা সংশ্লিষ্ট কেউ ঈদ বকশিস বা অন্য যেকোনো নামে টাকা আদায় করলে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাইফুল আলম। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, যাত্রী হয়রানিমুক্ত টিকিট কালোবাজারি বন্ধ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ ও সড়কপথে চাঁদাবাজি বন্ধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

লিখিত বক্তব্যে সাইফুল আলম আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে যে পরিমাণ যাত্রী সড়কপথে যাত্রা করবেন, তাদের নির্দিষ্টসংখ্যক গাড়ি দিয়ে কম সময়ে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানো কষ্টদায়ক কাজ। ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, যানজটমুক্ত এবং সড়কপথ চাঁদাবাজিমুক্ত রাখার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যৌথবাহিনী ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিসহ দেশের সব জায়গায় যৌথসভা করা হয়েছে। আমরা ঢাকাস্থ টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের যাত্রাপথে সার্বিক সহযোগিতায় এবং নিম্নোক্ত বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!