অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে বিদেশি সহায়তা বৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি হয়। সরকারের নানা মহল থেকেও এ বিষয়ে শোনানো হয় আশার বাণী। অথচ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বৈদেশিক ঋণের নতুন প্রতিশ্রুতি কমে গেছে। দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৮ শতাংশ। কমে গেছে অর্থছাড়ও।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে কেবল ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছিল। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো প্রতিশ্রুতি কমেছে।
বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও অনুদানের বিষয়ে গত আট মাসে ৪১টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। পরবর্তী সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে এসেছে ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি। আর জাপান থেকে ২৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণের নতুন প্রতিশ্রুতি আশা করে লাভ নেই। নির্বাচিত সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকার চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করেই মূলত বিদেশিরা দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করে। নতুন প্রকল্প তৈরি করা না গেলে বিদেশি প্রতিশ্রুতি মেলে না। দাতারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সেই সঙ্গে হয়তো ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ পলিসি গ্রহণ করেছে।
এদিকে, আগের প্রতিশ্রুত বিদেশি ঋণের অর্থছাড়ও কমেছে। গত ৮ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিয়েছে এডিবি, যার পরিমাণ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক ৯৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছাড় করেছে। জাপানের কাছ থেকে এসেছে ৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার এসেছে রাশিয়া থেকে। চীন অর্থছাড় করেছে ২৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। ভারতের কাছ থেকে অবশ্য এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থছাড় হয়নি। অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী থেকে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার এসেছে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামনে নির্বাচন রয়েছে। আর নির্বাচনের আগে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করে। তাই অনেকেই হয়তো ওয়েট অ্যান্ড সি পলিসি গ্রহণ করছে। আবার দেখা যায়, আগে দেয়া প্রতিশ্রুত অর্থ ব্যয় করতে না পারলে নতুন করে অর্থায়ন আসে না। ব্যয় করতে না পারায় পাইপলাইনে অনেক অর্থ জমা হয়ে যায়।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্প সহায়তা পেতে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। নতুন প্রস্তাব তৈরি করা না গেলে প্রতিশ্রুতি বাড়বে কীভাবে? আবার দাতাদের বরাদ্দ করা অর্থের কোটা শেষ হয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি কমে আসে। তবে আগামী অর্থবছরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্থায়ন বাড়তে পারে। এ বছর বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক ঠিকাদার পালিয়েছে। আবার বেশকিছু প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে, কাটছাঁট করা হয়েছে। তাই প্রকল্পের গতি কমে এসেছিল। এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রকল্পের গতিও বাড়ছে।
আপনার মতামত লিখুন :