বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

ট্রলার তৈরিতে ব্যস্ত কাঠমিস্ত্রীরা, সমুদ্র যাত্রায় প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা

আরিফ হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা)

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

ট্রলার তৈরিতে ব্যস্ত কাঠমিস্ত্রীরা, সমুদ্র যাত্রায় প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বর্ষার আগমনে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে বড় প্রস্ততি নিচ্ছে ভোলার চরফ্যাশনের মৎস্যজীবিরা। এতে নতুন ট্রলার তৈরি ও পুরাতন ট্রলার মেরামত করে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঠমিস্ত্রীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ আর ব্যস্ততায় জেলে পল্লিতে। এতে উচ্ছাসিত জেলে পল্লির নৌকা ও ট্রলার শ্রমিকের পাশাপাশি মৎসজীবিরা।

ট্রলার ও নৌকা নির্মান শ্রমিকরা কেউ ট্রলারের গুঁড়া লাগাচ্ছেন, কেউ কাঠ মসৃণ করছেন, কেউ তক্তা জোড়া লাগানোর কাজ করছেন। মিস্ত্রিদের হাঁতুড়-বাটালের আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে এসব জেলে পল্লিগুলো।

নতুন ট্রলার তৈরির কাজ চলছে এবং পুরাতন ট্রলার মেরামতের কাজ চলছে পুরোদমে। এসব ট্রলার মেরামতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক কাঠমিস্ত্রীরা। 

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বেতুয়া, নতুন সুইজ, সামরাজ, খেজুর গাছিয়ার মৎস্যঘাট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানাযায়, প্রতিবছরে বর্ষার আগমনে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নতুন ট্রলার ও নৌকা তৈরির হিড়িক পড়ে প্রত্যেক মৎস্যঘাটে। নৌকা তৈরিতে সময় কমা লাগলেও একটি ট্রলার তৈরি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে।

ট্রলার-নৌকার আকার ও প্রকারে ভেদে মজুরি দেয়া হয় শ্রমিকদের। একটি ট্রলার তৈরি করতে কমপক্ষে ২ লাখ টাকার বেশী মজুরি আসে। ট্রলার মালিকদের কাছ থেকে কাঠমিস্ত্রীর বেতন দৈনিক জনপ্রতি ১২০০ টাকা ও সহকারীদের ৮০০টাকা মুজুরি নির্ধারন করা হয়ে থাকে।

বড় নতুন ট্রলার ৩৪ ফুট লম্বা, ১৫ ফুট চওড়া। ট্রলার তৈরি করতে প্রয়োজন প্রায় ৫০০ সেফটি মেহেগুনি ও রেইন্ট্রি কাঠ। প্রায় ১০০ কেজি আলকাতরা। ট্রলারে ৪০ গড়া একটি চায়না ইঞ্জিন ও একটি ২৬ গিয়ার সংযুক্ত করতে হয়।

এতে ছোট আকৃতির একটি ট্রলার তৈরিতে প্রায় ১২ লাখ ও বড় আকৃতির সমুদ্রগামী একটি ট্রলার তৈরিতে ২৫ থেকে ৩০ লাখ  টাকা খরচ হয়। গতবছরে ইলিশের অকাল থাকায় এবছর তুলনামূলক নতুন ট্রলার তৈরি কম হচ্ছে।

কিন্তু চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিস্ত্রী ও হেলপার এনে ট্রলার তৈরি করেছেন  ট্রলার মালিকরা।

সামরাজ মৎস্য ঘাট মেঘনা নদী সংলগ্ন আব্দুল মাঝির নতুন একটি ট্রলার তৈরির কাজে নিয়োজিত কাঠমিস্ত্রী মোবাশ্বর তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক ট্রলার নির্মাণের কাঠমিস্ত্রী রয়েছে।

পাশপাশি তাদের সঙ্গে রয়েছে প্রায় ২ শতাধিক সহকারী। ট্রলার-নৌকার প্রকার ভেদে তার অনেক ঠিকা মেরামত নতুন নির্মান করে থেকেন। বেশি ভাগই মালিক পক্ষের সাথে দৈনিক মুজুরিতে ও কাজ করেন তারা।

এতে একজন বড় মিস্ত্রির বেতন নির্ধানর করা হয় ১২০০ টাকা এবং সহকারীদের জন্য বেতন নির্ধারন করা হয় ৮০০টাকা। চলতি মৌসুমে মৎস্য জীবিরা ব্যপক ভাবে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নেয়ায় ট্রলার ও নৌকা তৈরিতে  ব্যস্ত সময় পাড় করেছেন তারা।

ট্রলার মালিক আব্দুল মাঝি জানান, পেশায় তিনি একজন জেলে পাশাপাশি নিচের ট্রলারে মাঝি মাল্লা নিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে যান তিনি।

বর্ষার আগমনে জোরপ্রস্তিুতি নিচ্ছে মৎস্যবীবিরা। এতে নদীতে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা চলে এ জন্য জেলেরা অবসর সময় পেয়ে আগে থেকেই নতুন ট্রলার তৈরি ও পুরাতন ট্রলার মেরামত করছেন তিনিসহ উপজেলার ট্রলার মালিকরা।

নতুন সুইজ মেঘনা নদীর পড়ে ট্রলার মেরামত করছেন ট্রলার মাঝি সবুজ তিনি জানান,নদীতে  মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই কর্মহীন হয়ে পড়েছি। সেই সুযোগে আমার ট্রলারটি মেরামত করছি। আমার এই ট্রলারটি মেরামত করতে ২০-২৫ দিন সময় লাগবে।

ট্রলার মেরামতে প্রায় ৫০ কেজি পেরেক, ৫০ কেজি সুতা প্রয়োজন হবে। মিস্ত্রী খরচ সহ সবমিলিয়ে ১ লাখ টাকা খরচ হবে। সামরাজ এক মৎস্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দাদন নিয়েছি, বর্ষায় সাগরে মাছ পেলে তা বিক্রি করে পরিবারের ভরনপোষণ করণসহ আড়ৎদারের টাকা পরিশোধ করবো। 

সামরাজ ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী জহিরউদ্দিন নামে এক বলেন, এ উপজেলার প্রায় ১ লাখ পরিবারের আয়ের উৎস্য সমুদ্রে মাছ ধরা। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা সাগরে বিপদের সঙ্গে লড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

সামনের মৌসুমে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য এখানকার মৎসজীবিদের সাগর যাত্রার মহাকর্মযজ্ঞের প্রস্ততি নিচ্ছে। মৎস্য আড়ৎ মালিকদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কেউ নতুন ট্রলার বানাচ্ছে কেউ বা পুরানো ট্রলারকে মেরামতে করছেন। জেলেদের মনে বড় আশা সাগরে মাছ ধরে জীবিকা-নির্বাহ পাশাপাশি আড়ৎদারের দাদন পরিশোধ করে থাকেন।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, এ উপজেলার মৎস্যজীবিদের সাগরযাত্রার মহাকর্মযজ্ঞের প্রস্ততি চলছে। এতে কেউ নতুন এবং কেউ পুরাতন ট্রলার মেরামত করছেন। এসব কাজে নিয়োজিত রয়েছেন কাঠমিস্ত্রীরা।

ট্রলার মেরামতের জন্য এবং কাঠমিস্ত্রীদের কাজের সুবিধার্থে এ উপজেলায় সরকারি ভাবে কোনো ডকইয়ার্ড দেয়া যায় কি না উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠনো হবে।

যাযাদি/এস

আরবি/আবু

Link copied!