বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

দ্বিতীয় দিনেও স্বস্তিতে বাড়ি গেছেন ঢাকাবাসী

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

দ্বিতীয় দিনেও স্বস্তিতে  বাড়ি গেছেন ঢাকাবাসী

ছবি: সংগৃহীত

ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে গতকালও স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরেছেন ঢাকা নগরবাসী। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকালের ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের খুব একটা চাপ লক্ষ করা যায়নি। তবে আজ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকায় এবং ঈদের আগে শুধু বৃহস্পতিবার একমাত্র কর্মদিবস হওয়ায় সেদিনের ছুটি নিয়ে অনেকেই বিকেল ও রাতের ট্রেনে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। 

ফলে সকাল থেকে বিকেল ও রাতের ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের তুলনামূলক ভিড় ছিল বেশি। একই সঙ্গে বাসেও বেড়েছে যাত্রীদের ভিড়। সদরঘাটে যাত্রী উপস্থিতি আগের তুলনায় বেড়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন মূলত কর্মজীবীরা মানুষের তাদের পরিবার-পরিজনকে বাড়ি পাঠাচ্ছেন আর যাদের রাজধানীতে বিশেষ কোনো কাজ নেই তারা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তবে বৃহস্পতিবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় ওইদিন সন্ধ্যা থেকে মূল গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামবে। 

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথমে ছেড়ে যায়। এরপর একে একে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায় অন্যান্য ট্রেন। প্রথমদিন দুই-একটি ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় হলেও গতকাল তা খুব একটা হয়নি। ট্রেনগুলোতে ছিল না যাত্রীদের খুব একটা ভিড়ও। 

অন্যদিকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চঘাটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

সরেজমিনে সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের পার্কিং এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে যাত্রীরা হেঁটে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশ করছেন। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে তাদের তিন দফা চেকিংয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। 

চেকিং গেটগুলোতে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) পাশাপাশি তাদের কাজে সহযোগিতা করছেন স্কাউট সদস্যরা। স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায়ও নেই যাত্রীদের খুব একটা ভিড়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের খুব একটা অপেক্ষায়ও করতে হয়নি। 

জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে কোনো ট্রেন বিলম্ব হয়নি এটাই সবচেয়ে অবাক করা বিষয়। দুই তিন বছর আগেও একটি ট্রেনের জন্য যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করতে হতো আমাদের। এবার এসে দেখলাম যাত্রীই নেই প্ল্যাটফর্মে। ট্রেনগুলো লাইনে রাখা। কোনো হকার নেই প্ল্যাটফর্মে। এমন স্টেশন দেখতে অনেক ভালো লাগছে।

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী তছলিমা আক্তার বলেন, আজ (বুধবার) ট্রেনগুলোতে তেমন ভিড় দেখলাম না। স্টেশনেও তেমন কোনো মানুষ নেই। আমাদের ট্রেনেও কোনো ভিড় নেই। অনেকের হয়তো এখনো ছুটি হয়নি। আমাদের মতো যাদের সুযোগ আছে তারাই এখন ট্রেনের যাত্রী। ভিড় এড়াতেই ঈদের পাঁচ দিন আগে বাড়ি যাওয়া।

কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রী ফারহানা ইসলাম বলেন, আমার স্বামীর অফিস ছুটি হবে বৃহস্পতিবার। সে ওইদিন বাড়ি যাব। তবে বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ায় তাদের নিয়ে আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি। শেষ সময়ে ভিড় বাড়তে পারে সেই বিবেচনায় আগেভাগেই চলে যাচ্ছি। 

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সারা দিনে মোট ৪৩টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২৫টি মেইল ও কমিউটার ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাবে। প্ল্যাটফর্মে টিকিটবিহীন প্রবেশ বন্ধে কয়েক স্তরের চেকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।

যাত্রীরা বিনা ঝামেলায় ট্রেনে উঠতে পারছেন। বরাবরের মতো বাংলাদেশ রেলওয়ে এবারও ঈদযাত্রায় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিনা টিকিটে যাত্রী প্রতিরোধে ও স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করতে দেশব্যাপী বড় স্টেশনগুলোতে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকছেন।

স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য বছর ঈদযাত্রায় ৮ থেকে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালাত বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এবার সেটি কমিয়ে ৫ জোড়া করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিদিনের যাত্রায় কোনো ভোগান্তি যেন না হয় এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমরা যাত্রীদের সেবায় সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছি। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছালে সে ট্রেন ছাড়ায় কোনো বিলম্ব হবে না।

এবারের ঈদযাত্রায় ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন হলো- ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল এবং জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল। 

ঈদযাত্রা উপলক্ষে ট্রেনগুলোতে বাড়তি ৪৪টি বগি যুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া ২৭ মার্চ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সব ট্রেনই নির্ধারিত সময় ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে। আজ এখন পর্যন্ত ইনশাল্লাহ কোনো ধরনের বিলম্ব হয়নি। 

বাসেও বেড়েছে ভিড়: রেলপথে যাত্রীদের কিছুটা চাপ থাকলেও সড়কপথে এখনো ভিন্ন চিত্র। মহাখালী, গাবতলীসহ অন্যান্য বাস টার্মিনালগুলোতে নেই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। 

তবে গত মঙ্গলবারের তুলনায় গতকাল চাপ কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকেই আগেভাগে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। দীর্ঘ ছুটির কারণে যাত্রীরা ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ছেন, ফলে চাপ কমেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।

গাবতলী টার্মিনালে শ্যামলী পরিবহনের সিনিয়র কাউন্টার ম্যানেজার প্রভাত বলেন, বর্তমানে কাউন্টারে ভিড় নেই। তবে গার্মেন্টস ও সরকারি ছুটির কারণে ২৭, ২৮ ও ২৯ মার্চ থেকে ছুটি বাড়বে। গোপালগঞ্জ পিরোজপুরগামী কমফোর্ট পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সেন্টু মিয়া বলেন, এখন টিকিটের অভাব নেই। গাবতলী আসলেই টিকিট মিলছে।

দুই সন্তান নিয়ে গাবতলীতে বসে আছেন মেহের নিগার। গন্তব্য নওগাঁর বদলগাছী। স্বামী আরিফ সোহেল সমাজসেবা অধিদপ্তরে কর্মরত। সরকারি চাকরি করায় স্বামীর ছুটি মিলবে আরও পরে। তাই ঝামেলা এড়াতে পরিবারের সদস্যরা আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!