সুন্দরবনে গত ২৩ বছরে ২৭ বার আগুন লেগেছে। যার সব কটি ঘটেছে পূর্ব সুন্দরবন এলাকার চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের বনাঞ্চলে এবং লোকালয়-সংলগ্ন ভোলা নদীর পাশে।
প্রতি বছর প্রায় একই সময়ে এই অগ্নিকাণ্ডগুলি ঘটে। এইসব অগ্নিকাণ্ড শুধু জীববৈচিত্র্য নষ্টই করে না বরং বনের মাটির গুণাগুণও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে আগুনের সূত্রপাত বলা হলেও, দোষীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে না। ফলে, আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগুনের ঘটনার পেছনে একটি পরিকল্পিত মহল জড়িত। তবে তারা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
গত ২২ মার্চ শরণখোলা উপজেলার চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজি এলাকায় আগুন লেগেছিলো। যা নিয়ন্ত্রণে আসলেও পরদিন শাপলার বিল তেইশের ছিলা এলাকায় আবারও আগুন দেখা যায়। এতে পুড়ে যায় গাছ, লতা ও গুল্ম।
বন বিভাগ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গত বছরও লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগেছিল। ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয় জেলে-মৌয়ালরা অভিযোগ করেছেন, আগুন নিয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।
তারা বলেন, ‘আমরা যদি বন না পাই তাহলে আমাদের বাঁচার উপায় কী?’
বিশেষজ্ঞরা এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতাকেই দায়ী করছেন। তবে তারা মনে করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত কাজও হতে পারে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে এসব ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
বন বিভাগ এ বিষয়ে নজর রাখছে এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে। খুলনা বন সংরক্ষক মো. ইমরান আহমেদ বলেন, ‘অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। এতে তাদের কিছু সুবিধা হয়। এ বিষয়ে আরও উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। ’
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি পৌঁছানোর জন্য ভোলা নদী ও খাল খনন করা হচ্ছে।