ভবিষ্যতে ট্যাক্স নির্ধারণ করবে জাতীয় সংসদ সদস্যরা এবং শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যসূচিতে ভ্যাট-ট্যাক্স অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এমন তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘সরকার বা এনবিআর ট্যাক্সের সীমা নির্ধারণ করবে না, এটি নির্ধারণ করবে পার্লামেন্ট। ইতোমধ্যে আইন সংস্কারের কাজ চলছে, যা শিগগিরই কার্যকর হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে আমরা করবিষয়ক পাঠ্যসূচি চালু করতে চাই, যাতে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই কর সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। এ বিষয়ে দক্ষ লেখকদের লিখতে বলা হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে করবিষয়ক লেখা আহ্বান করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, আগামী করবর্ষ অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে শতভাগ অনলাইননির্ভর রিটার্ন জমা হবে এবং এনবিআর মোবাইল অ্যাপস নিয়েও কাজ করছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে এক কোটি ৪৫ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে মাত্র ৪৫ লাখ রিটার্ন জমা দেন। কোনো জবাবদিহিতা নেই, কোনো নোটিশ নেই, কোনো অ্যাসেসমেন্ট নেই। আমি কমিশনারদের প্রশ্ন করি, আপনারা নোটিশ করছেন না কেন? যারা রিটার্ন দেন, তারা কেন দেন? এটি একটি বড় প্রশ্ন।’
তিনি কর আদায়ে পূর্বের ভুল পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা করনীতিকে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মকভাবে ব্যবহার করেছি। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, টেবিলে বসেই কর আদায় সম্ভব হবে। কিন্তু এনবিআরের কার্যকরী ভূমিকা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী, যারা রিটার্ন জমা দেন, তাদের দুই-তৃতীয়াংশই করযোগ্য নয়। অনলাইনে ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়লেও, এর মধ্যে ১০ লাখই শূন্য রিটার্ন। ২০১৪ সালে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখের নিচে, যা এখন এক কোটি ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। কিন্তু রিটার্ন না দিলে কোনো সমস্যা হয় না।’
সবার জন্য ট্যাক্স এডুকেশন জরুরি উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে করদাতারা সচেতন হয় না। আমরা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে করবিষয়ক পড়াশোনা চালু করতে চাই, যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই কর সম্পর্কে জানে এবং বুঝতে পারে কর দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ স্তরে করসংক্রান্ত অঙ্ক যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘মোট ভাড়া মূল্যের ভিত্তিতে বাড়িভাড়া আয় পরিগণনা ও সূত্র পরিহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত ধারাটি পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস বলেন, ‘বর্তমানে এলাকাভিত্তিক ন্যূনতম করের একটি সমস্যা রয়েছে। কেউ ঢাকায় চাকরি করেন, কিন্তু থাকেন অন্য জেলায়। বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের জন্য এটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সারা দেশে একটি নির্দিষ্ট কর হার নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’
আপনার মতামত লিখুন :