প্রতিবারের মতো এবারও সময়মতো বেতন-বোনাস পাননি অনেক কারখানার শ্রমিকরা। সরকারের নানা উদ্যোগেও শতভাগ বেতন-বোনাস নিশ্চিত করা যায়নি। বেশির ভাগ কারখানায় ঈদের ছুটি শুরু হলেও খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন শ্রমিকরা।
২০ রোজার আগে বেতন-বোনাসসহ সব পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৫তম সভায়। এক সপ্তাহ পার হলেও বহু কারখানা বেতন-বোনাস দিতে পারেনি।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ৯ হাজার ৬৯৫ কারখানার মধ্যে মার্চের বেতন দিয়েছে ১ হাজার ৮৩৫টি। দিতে পারেনি ৭ হাজার ৮৬০টি। ঈদ বোনাস দিয়েছে ৬ হাজার ৬৭৩টি। ৩ হাজার ২২ কারখানা বোনাসও দিতে পারেনি।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বিজিএমইএ’র ২ হাজার ১০৭ কারখানার মধ্যে মার্চের বেতন ১৫ ও ৩০ দিনের পরিশোধ করেছে ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা; যা ছুটির আগে দেওয়ার কথা। ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারির বেতন দেয়নি ২ হাজার ১০৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি। ২৬ মার্চ ছুটি হয়েছে ১৩০ কারখানার। ছুটি হয়েছে ৩৩৪টির। আজ ছুটি হবে ৫১৮ কারখানার। সর্বশেষ ২৯ মার্চ ছুটি হবে ৭৮৭ কারখানার।
শিল্পপুলিশের তথ্যানুযায়ী, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, পাটকল, বেপজা ও অন্যান্য মিলে মোট ৯ হাজার ৬৯৫ কারখানার মধ্যে মার্চের বেতন দিয়েছে ১ হাজার ৮৩৫টি। দিতে পারেনি ৭ হাজার ৮৬০ কারখানা। ঈদ বোনাস দিয়েছে ৬ হাজার ৬৭৩ কারখানা। ৩ হাজার ২২ কারখানা বোনাসও দিতে পারেনি। জানুয়ারির বেতন এখনো দেয়নি ৩০ কারখানা। ২ হাজার ৮৯০ কারখানার মধ্যে ফেব্রুয়ারির বেতন দিয়েছে ২ হাজার ৭৬৮টি। এখনো ১২২ কারখানা বেতন দিতে পারেনি। মার্চের বেতন দিয়েছে ৪২২ প্রতিষ্ঠান। দিতে পারেনি ২ হাজার ৪৬৮ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঈদের বোনাস দিয়েছে ২ হাজার ১৬৭টি। বাকি আছে ৭২৩ প্রতিষ্ঠান। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দেওয়ায় ১২ কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তারা বেতন-বোনাস না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারবেন না।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ায় রোয়ার ফ্যাশন নামক প্রতিষ্ঠানের আপৎকালীন হিসাব থেকে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৪ টাকা কেটে দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রসারিত করা হবে না। প্রতিষ্ঠানটির মালিক পলাতক আছেন। তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, টিএনজেড গ্রুপের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে। মাহমুদ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তাদের নগদ সহায়তা বাবদ ১১ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। স্টাইলক্রাফট অ্যান্ড ইয়াংওয়ান বিডি লিমিটেডের বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, শ্রমিকরা পাওনা পেয়ে যাবেন। প্রায় সব সমস্যাই সমাধান হয়ে গেছে। এ ঈদ অন্যান্য ঈদ থেকে অনেক ভালো। অন্যান্য বছরের তুলনায় শ্রমিক অসন্তোষ কম। পোশাক খাতের অনেকেই ভালো করছেন। এ শিল্পটা বসে যায়নি। পোশাকশিল্পে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।