সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

স্বস্তির যাত্রায় বাড়তি ভাড়ায় অস্বস্তি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৫, ১১:৪০ এএম

স্বস্তির যাত্রায় বাড়তি ভাড়ায় অস্বস্তি

ছবি: সংগৃহীত

শহুরে নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ফেলে পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। রাজধানীর সড়কগুলোতে গতকাল শুক্রবার ছিল না চিরচেনা ব্যস্ততা বা যানজট। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ পালিত হতে পারে ঈদুল ফিতর। সম্ভাব্য এ তারিখ ধরে গত বৃহস্পতিবারই ছিল ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস।

এদিন বিকেলে অফিস-আদালত ছুটির পর থেকেই রাজধানীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় বহু মানুষকে ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়।

তবে এবারের ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত বাস টার্মিনাল, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও লঞ্চঘাটে চিরচেনা উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়েনি। তাই তো যাত্রীদের চোখেমুখে বিরাজ করছিল স্বস্তির ভাব। অবশ্য তাদের এ স্বস্তিতে বাগড়া বসায় যানবাহনের বাড়তি ভাড়া এবং এর সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। অন্যদিকে ঢাকা ছাড়তে পড়তে হয় যানজটে। সব মিলিয়ে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও এবারের ঈদযাত্রা  পর্যন্ত স্বস্তিরই ছিল বলা চলে।

ঈদযাত্রায় চিরচেনা ভিড় না থাকার যুক্তি হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ায় কয়েক দিন ধরে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ফলে একসঙ্গে বেশি যাত্রীর চাপ নেই যানবাহনে। আর বাড়তি ভাড়ার কারণ হিসেবে শোনা গেছে, ফিরতি পথে বাসগুলো আসছে অনেকটা যাত্রীশূন্য হয়ে। মূলত এ লোকসান পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে হচ্ছে।

বাসে আশানুরূপ যাত্রী না পাওয়ার আক্ষেপের সঙ্গে বাড়তি ভাড়া

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবি মাহাবুব হাসান সাধারণ কোনো পরিবহনের অগ্রিম টিকিট কেটে বাড়ি যান না। গাবতলীতে এসে যেকোনো লোকাল বাসে পাটুরিয়া, তারপর ফেরিতে নদী পার হয়ে অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌঁছে যান। এবারও একই প্রস্তুতি নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অন্য সময় পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত লোকাল বাসে ১৫০ টাকা দিয়ে গেলেও এবার তার গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। এ রুটে কোনো কোনো যাত্রীর কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি ভাড়া নিতেও দেখা গেছে।

গাবতলীতে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা জানান, বাস ঠিক সময়ে ছাড়ছে। তবে আশানুরূপ সংখ্যায় যাত্রী না পাওয়ায়  পরিবহন শ্রমিকদের আক্ষেপ করতে দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গাবতলী বাস টার্মিনালে এবারের  ঈদযাত্রায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় নেই। কাউন্টারের সামনে যাত্রী খুঁজছেন টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আবার  কেউ কেউ হ্যান্ডমাইকেও ডেকে ডেকে যাত্রী খুঁজতে ব্যস্ত।

বরিশাল রুটের সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার মো. ফারুক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে গাবতলীতে যাত্রী আর আগের মতো আসে না। এখনো চিল্লায়ে টিকিট বিক্রি করছি। সিটও খালি আছে।

গাবতলীর সড়কে যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সচেষ্ট থাকতে দেখা গেছে।

গাবতলী টার্মিনালে দায়িত্বরত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভিজিলেন্স টিমের সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।

ট্রেনের জাল টিকিটে গচ্চা ভাড়ার টাকা

এবারের ঈদযাত্রার প্রথম তিন দিন যাত্রী কম থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেনে ভিড় বাড়তে থাকে। শুক্রবারও ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় কমলাপুর স্টেশনে। নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াচ্ছে ট্রেন। ধীরেসুস্থে ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা। তবে এসব যাত্রীর অনেকের কাছেই জাল টিকিট পাওয়ার কথা শোনা গেছে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ দামে জাল টিকিট কিনে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে।

চেকিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, এক যাত্রী একতা ট্রেনে শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশনে যাবেন। এজন্য দোকান থেকে একটি টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তার টিকিট টি ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করা, সেটি তিনি স্টেশনে এসে বুঝতে পারেন। পরে তাকে জরিমানাসহ ওই গন্তব্যের ভাড়া আদায় করে যেতে দেওয়া হয়। ওই জাল টিকিটে এনআইডির অনুলিপি দেওয়া আছে মো. হুজাইফা জাবির নামে এক ব্যক্তির। টিকিটে প্রারম্ভিক স্টেশনের জায়গায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের পরিবর্তে লেখা আছে কমলাপুর। গন্তব্যের জায়গায় লেখা মিস্টার এম মনসুর আলী।

স্টেশনটিতে দায়িত্বরত টিটিইরা  বলেন, চেক করলেই ১০০টি টিকিটের মধ্যে ১০টির বেশিই জাল পাওয়া যাচ্ছে।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের বাণিজ্যিক কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকে অসংখ্য জাল টিকিট পাওয়া গেছে। তাদের অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে স্টেশন থেকে। আবার অনেককে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করে যেতে দেয়া হয়েছে।

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছাড়ছে।

পর্যাপ্ত লঞ্চ আছে, আশানুরূপ যাত্রী নেই

এবারের ঈদ যাত্রায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ না দেখা গেলেও লঞ্চ ছাড়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এতে পড়েন যাত্রীরা ভোগান্তিতে।

টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর সুবিধা ও দীর্ঘ ছুটির কারণে যাত্রীদের চাপ অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। ফলে নৌ-পথে ঈদের যাত্রা এবার বেশ স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। তবে যাত্রী কম থাকায় বিলম্বে ছাড়ছে লঞ্চগুলো। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় আগের কয়েক দিনের তুলনায় সদরঘাটে যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সবরকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে ৪০টির মতো লঞ্চ ছেড়ে গেছে। রাত পর্যন্ত এ সংখ্যা শতাধিক হবে। যাত্রীর চাপ বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই।

আরবি/এসবি

Link copied!