মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়ছে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রিতে জমজমাট রাজধানীর গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম মার্কেট। বিক্রেতারা বলছেন, আতর ও টুপি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদের দুই-একদিন আগে। ফলে, জমে উঠেছে ক্রেতাদের পদচারণায় ঈদের বাজার।
চাহিদার তুঙ্গে রয়েছে বিদেশি আতর। টুপির বাজারে বিক্রি বেশি দেশি টুপির। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে গত বছরের তুলনায় আতর ও টুপির দাম প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শনিবার বায়তুল মোকাররম-গুলিস্তান মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাত থেকে দোকান পর্যন্ত সর্বত্রই ভিড়। টুপি ও আতরের দোকানে সবচেয়ে বেশি ভিড়। বিক্রেতারা বলছেন, সারা বছর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে জায়নামাজ, আতর, টুপি, হিজাব, বোরকা, তসবিহ এসব বিক্রি হলেও ঈদে চাহিদা বেশি থাকে। সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতার আনাগোনা থাকে।
আতর-টুপির দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ছোট-ছোট দোকানে একটার পর একটা সাজানো বাহারি সব টুপি। তাতে ক্রেতাদের বেশ আনাগোনা। দরদাম করে যার যার সাধ্য অনুযায়ী সামগ্রী কিনছেন ক্রেতারা। যেমন রয়েছে সর্বনিম্ন দামের টুপি তেমনই রয়েছে সর্বোচ্চ দামের।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটে আতর, টুপি, জায়নামাজসহ ধর্মীয় পণ্যের অন্তত ২০০ দোকান রয়েছে। প্রতি বছর শাবান মাস থেকেই তাদের বিক্রি বেড়ে যায়। একটানা চলে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত। ধর্মীয় সব জিনিসের রোজা এবং ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে।
আব্দুল আহদ নামের এক ক্রেতা জানান, ঈদ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন টুপি। রমজানে আতর, সুরমা, টুপি, জায়নামাজ ও তসবিহর ব্যবহার বেড়ে যায়। তাই, ঈদের পোশাকের পাশাপাশি আতর-জায়নামাজ ও টুপি-তসবিহ প্রয়োজন হয়। কিনতে এসে দেখি দোকানগুলোতে বাড়ছে নানা বয়সি ক্রেতাদের ভিড়।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মার্কেট, গুলিস্তানের খদ্দর বাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মার্কেটে আল আমিন ইসলামিক এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মুমিন বিল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমাদের বিক্রি অনেক বেড়েছে। প্রথম রোজা থেকেই প্রতিদিন ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক বেশি।
এবার দরবার, গোলাপ, বেলি, কস্তুরী, সুলতান, বুরুট, সালমা ইত্যাদি আতর বেশি বিক্রি হচ্ছে। দেশি আতরের পাশাপাশি বিদেশি, যেমন: কম্বোডিয়া, ভারত, বুলগেরিয়া, দুবাই, ফ্রান্স, সৌদি আরব থেকে আতর বেশি আসে আমাদের এখানে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতর বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, ইয়ামেনি মার্কেট এবং গুলিস্তান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে আগত ক্রেতারা বলছেন, রমজান শেষ পর্যায়ে, কাল বা পরশু ঈদ। শুরু হয়েছে ঈদের পুরো আমেজ । স্কুল-কলেজ ছুটি হওয়ার কারণে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
প্রতিবছর ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদেই নতুন পোশাক কেনার রেওয়াজ চালু রয়েছে। এরমধ্যে পায়জামা এবং পাঞ্জাবি ছাড়াও পুরুষদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে টুপি ও আতর। তাই দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি কিংবা বিদেশি ব্র্যান্ডের টুপি ও আতর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার গ্রামের বাড়ির বয়স্ক এবং মুরুব্বিদের জন্যও সুরমা ও জায়নামাজও কিনে নিচ্ছেন অনেকে।
সুমন হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে এসেছি। বাইরে অনেক টুপির দোকান রয়েছে। অনেক ডিজাইনের টুপি পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামে টুপির দামও বেশি। সেজন্য ঢাকা থেকেই আমার ও ছেলের জন্য দুটি টুপি কিনেছি। অন্য জায়গার তুলনায় এখানে দাম স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। তবে আতরের দামটা অনেক বেশি।
মদিনা আতর স্টোরের বিক্রেতা আসিক রহমান বলেন, আমাদের কাছে ৩০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা দামের টুপি আছে। মানুষ নিজেদের মতো কিনছে। আতরের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে বেশিরভাগ আতর আসে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
এর মধ্যে রয়েছে আম্বার, হুগোবস, গুচি, রোমান্স, সিলভার, মেশক, জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাতুল নাঈম, শাইখা, হাজরে আসওয়াদ, সুলতান, উদ, কিংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতর। এই আতর বিক্রি হয় তোলা হিসেবে। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের আতর আছে।
আতর হাউসের মালিক মনির হোসেন বলেন, আতর এবং টুপি দাম দুটোরই বেড়েছে। চাহিদা সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি টুপির। গতবারের তুলনায় এবার আতরে বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বর্তমানে মোখাল্লাত আতর ৬০০ টাকা তোলা, ব্লাডব্যাম্পার ৮০০ টাকা, বারবেরি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, মিশকাম্বার ও কস্তুরি ১ হাজার ২০০ টাকা, নেভিয়া ৬০০ টাকা, হোয়াইট ১ হাজার ২০০ টাকা, রাশিকা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা তোলা বিক্রি করছি। গত বছরের ৬০০ টাকার আতর দাম এবার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের উপস্থিতি বিষয়ে বলেন, বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে আতর বিক্রি হয় মূলত ঈদের দুই-একদিন আগে। ঈদের আগের দিন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। ফলে আজ বেশ বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা জামাল বলেন, টুপির দাম গত বছরের তুলনায় সামান্য বেশি। পাকিস্তানি ও আফগানি টুপি বেশি বিক্রি হচ্ছে। দুবাই, আরব আমিরাতের টুপির চাহিদাও খারাপ নয়। টুপির বর্তমান দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুনাইদ জামসেদ টুপি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, ওমানি ৩০০ থেকে ৫০০, আফগানি ৫০০ থেকে ৬০০, ইন্দোনেশিয়ান ২৫০ থেকে ৩০০, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি টুপি ৮০০ থেকে ১০০০, পাকিস্তানি ২৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিরাজ ইসলামিক ফ্যাশনের বিক্রেতা রকিব বলেন, কিছু কিছু আতর এবারে পাওয়া যাচ্ছে না। ৬ মিলি আতরের দাম যেখানে গতবার ১২০ টাকা ছিল এবার দাম ২২০ টাকা। তুলনামূলক আতরের দাম বেড়েছে। গত বছর আতরের ৪০ টাকা মিলি থাকলেও এবার ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
আতর এবং টুপির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় এগুলোর দাম বেড়েছে। গত বছর ৯৫ টাকা ডলার থাকলেও এবারে ১২৬ টাকা। আমদানি যারা করে তারা কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা যেখানে বেশি দামে কিনি সেখানে কম দামে বিক্রি করতে পারব না। সব মিলিয়ে মানুষ কিনছে।
হাসান শহীদ নামের এক ক্রেতা জানান, খুব বেশি প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর আতর টুপি কেনেন তিনি। টুপির দাম কিছুটা বেড়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ৫০-১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হলেও তার আপত্তি নেই। এ ছাড়া লর্ড আতর মার্কেটে পাননি তিনি। লর্ড ৬ মিলি আতর ১২০ টাকা থেকে বেড়ে এবার ২৫০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বেশি হলে সেই পণ্য ক্রেতারা কেনেন না।