ঈদের ছুটির চার দিনে দেশের ১০টি বড় সরকারি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের করা গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ঈদুল আজহায় সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল মোটরসাইকেল; ৫১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এবার মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা প্রায় সমান।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত কোরবানির ঈদের প্রতিবেদনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোনো হিসাব ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবার ঈদে কয়েকটি হাসপাতাল তাদের রোগী নিবন্ধন খাতায় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে অটোরিকশার তথ্যও সংরক্ষণ করে।
ঈদের ছুটির ৪ দিনে (৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল) রাজধানীর দুটি এবং ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত ৮টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে এই পরিসংখ্যান উঠে আসে।
এতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ, অটোরিকশায় ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ, চার চাকার যানে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। হাসপাতালে আসা ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ আহত রোগীর দুর্ঘটনার কারণ নিবন্ধন খাতায় উল্লেখ করা হয়নি।
হাসপাতাল ১০টি হলো– জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের রোগী নিবন্ধন খাতার তথ্য মতে, দেশের ১০ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঈদের আগের দিন থেকে টানা ৪ দিনে মোট ১ হাজার ১৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন (৩২ দশমিক ২৭), ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও সিএনজি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ (৩২ দশমিক ১০ শতাংশ) জন আহত হন। বাস-মাইক্রোবাস-ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো ৪ চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন ১১৫ জন। তবে চিকিৎসা নেওয়া ২৯০ জনের আহত হওয়ার কারণ লেখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ঈদের ছুটিতে নয়, এখন মূল সড়কগুলোতে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে দেখা যায়। এতে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার । এসব বাহন নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্ঘটনার হার আরও বাড়বে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সরওয়ার বলেন, এবার ঈদে ঢাকা মহানগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় বেশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মামলা করার সুযোগ না থাকায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে। প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন হলে সড়কে রিকশা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রাথমিক তথ্যমতে, এবার ঈদে দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে নগরীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে চলায় অন্য যানবাহনের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব রিকশার কাঠামো এর গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে রাস্তায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা গণমাধ্যমে আসে না। এমনকি জেলা পর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর তথ্যও গণমাধ্যমে আসে না। সড়ক দুর্ঘটনার সব তথ্য গণমাধ্যমে এলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত।