সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫
ঈদযাত্রা

ফিরতি পথে ভোগান্তি ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১০:৫৬ এএম

ফিরতি পথে ভোগান্তি  ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঈদের সরকারি ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে খুলছে অফিস-আদালত। এ কারণে শুক্রবার-শনিবার রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাস টার্মিনাল, ট্রেন ও লঞ্চঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে অনেক পরিবহনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বাসের সংকট দেখিয়ে অনেক স্থানে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

গতকাল শনিবার সকালে বরিশাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যের বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ‘ইলিশ পরিবহন’ নামে একটি বেসরকারি বাস সার্ভিসের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। 

যাত্রীদের অভিযোগ, কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে সিট নেই। দ্রুত গেলে ভাড়া বেশি। ভাড়া দিলে সিট পাওয়া যাবে। আর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বেশি। গাইবান্ধায় ৫০০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ অবস্থায় সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিও এই সিন্ডিকেটের বাইরে নয়। 

অভিযোগ উঠেছে, বরিশালের বিআরটিসি ডিপোর হাফিজ ও কামাল নামের দুই চালকের নেতৃত্বে গঠিত একটি সিন্ডিকেট কৌশলে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। 

এ ধরনের সিন্ডিকেট চক্র ডিপোর ভেতরে মাত্র দুই থেকে তিনটি সিট বরাদ্দ রেখে বাকি যাত্রীদের বাইরে পাঠিয়ে জিম্মি করে রাখছে। রহমতপুর থেকে গৌরনদী পর্যন্ত পথজুড়ে থাকা বিআরটিসি কাউন্টারগুলো স্রেফ নামমাত্র সিট দিচ্ছে। অথচ এখন ঈদের পর প্রতিদিন গড়ে ২০টি ট্রিপ চালাচ্ছে বিআরটিসি। 

এদিকে, অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে বাস টার্মিনালে মোতায়েন রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। যানজট নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন।

বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে নিজের ভোগান্তির কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘ভাইরে ভাই, অ্যা বোজলে জীবনেও বাসে রওনা দিতাম না। পা হালাইলেই (ফেললে) ভোগান্তি। ৫০০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা দিয়াও টিকেট পাই না। ঈদে আর কোনো দিন বাসে উডমু না।’ বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাদলপাড়া থেকে এসেছেন তিনি, গন্তব্য ঢাকা। সঙ্গে ছোট দুই নাতি-নাতনি।

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘লঞ্চে ম্যালা ভিড় হুইন্না বাস টার্মিনালে আইছি। এইহানেও মউতের ভিড়। ঠেলাঠেলি, মারামারি। এহন ভার্সিটির দোতলা বাসে উডছি ৬০০ টাকা দিয়া।’

রোকেয়া বেগমই শুধু নন, ঈদুল ফিতরের ছুটির শেষ দিনে কর্মস্থলে ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের এভাবেই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে সড়কপথে। সময়মতো বাস না পাওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন বাস টার্মিনালে।

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউনিয়নের মুসলিম মাঝি। তিনি বলেন, ‘ওই গাড়ির টিকিট নিলেও বরিশাল নথুল্লাবাদ থেকে সবগুলো সিটই পূরণ হয়ে গেছে। তাই রহমতপুর থেকে আমাকে না উঠিয়েই বাসটি চলে গেছে। এখন সেই টাকা ফেরত পাব কি না, জানি না।’

কবিরুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, বিএমএফ কাউন্টারে টিকিট নিতে গিয়েছিলাম। সারা বছর ওরা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নিত। এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা নিচ্ছে। আমি প্রশ্ন করায় দুজন কলার ধরে আমাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা লোকারণ্য। নানা বয়সি মানুষ বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। সড়কে সারিবদ্ধভাবে বিআরটিসি বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন পরিবহন টার্মিনালের কাছাকাছি এলেই যাত্রীরা ছুটে যাচ্ছে খালি বাসের দিকে। 

পারুল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করছি। কোনো গাড়িতে টিকিট পাচ্ছি না। বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে।’ 
জানতে চাইলে র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক নিস্তার আহমেদ বলেন, ঈদের আগে যেভাবে যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরেছিলেন, তেমনি কর্মস্থলে ফেরার পথেও যেন নিরাপদে ফিরতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি। সড়কপথে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে র‌্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা সদর থেকে ঢাকার নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই চিত্রের কথা জানা গেছে গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকেও।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!