বাংলাদেশে কোটানির্ভর নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে মেধার মূল্যায়ন যথাযথভাবে হয় না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সবশেষ ২০২৪ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে গড়ে ওঠা ব্যাপক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
তবে এবার কোটা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হয় নারী কোটায়। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ পোষ্য এবং পুরুষ কোটা ২০ শতাংশ। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালায় এই ব্যবস্থা থাকছে না।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ‘প্রস্তাবিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়া তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নতুন এই খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটা থাকছে না। উচ্চ আদালতের রায় মেনে কোটা থাকবে মাত্র ৭ শতাংশ। বাকি ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। যে ৭ শতাংশ কোটা থাকবে, তার মধ্যে থাকবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটা।
সূত্র বলছে, এই নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় পদসংখ্যা বাড়তে পারে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় উচ্চ আদালতের রায়ের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৭ শতাংশ কোটাব্যবস্থা অনুসরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন হচ্ছে—আগের কোটাব্যবস্থা বাদ দিয়ে উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী কোটাব্যবস্থা চালু। এর বাইরে আরও কিছু বিষয় পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া সাপেক্ষে শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।’
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এক কোটিরও বেশি। এ ছাড়া শিক্ষক আছেন তিন লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষক এক লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন এবং নারী শিক্ষক দুই লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।