ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

একান্ত সাক্ষাৎকারে বাপেক্সের এমডি

গ্যাস অনুসন্ধানে পাঁচটির জায়গায় হচ্ছে ৮টি রিগ

স্বপ্না চক্রবর্তী
প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:০২ পিএম
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব। ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা। বিগত সরকারের আমলে চাহিদা পূরণে অনেকটাই আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ে খাতটি। সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদা ক্রমবর্ধমান থাকায় এখনই আমদানি বন্ধ না করতে পারলেও দেশের অভ্যন্তরে থাকা কূপগুলো খনন ও অনুসন্ধানে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে অন্তত ১০০টি কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভারের বড় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এমনকি এ সময়ের মধ্যেই প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করার লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার। এজন্য এগিয়ে আনা হয়েছে অনেক প্রকল্পের কাজ। আর বাড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) সক্ষমতা। বর্তমানে মাত্র পাঁচটি রিগ দিয়ে খনন-অনুসন্ধান কার্যক্রম চললেও ইতোমধ্যে আরও একটি রিগ আমদানির জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে আরও দুটি রিগ আনার। এগুলো চলে আসলে বাপেক্স নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব। রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান তিনি।

গত সোমবার নিজ কার্যালয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সরকার আগামী তিন বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯টি কূপের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছে। একইসঙ্গে ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে বাপেক্স ১০টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) দুটি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে। এর বাইরেও বাপেক্সের নিজস্ব রিগ দিয়ে ২৮টি, বিজিএফসিএলের রিগ দিয়ে দুটি, এসজিএফএলের রিগ দিয়ে তিনটিসহ মোট ৩৩টি কূপ খনন হবে। আর বাপেক্সের মাধ্যমে রিগ ভাড়া করে ১০টি কূপে চলবে খনন কাজ। আর আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাপেক্স ১৪টি, বিজিএফসিএল ৭টি, এসজিএফএল ৫টি কূপ খনন করবে। সব মিলিয়ে ৬৯টি কূপের খনন হবে। কূপগুলো ওয়ার্কওভার কার্যক্রমে বাপেক্সের রিগ দিয়ে হবে ১৬টি, বিজিএফসিএলের রিগ দিয়ে ১২টি, এসজিএফএল দিয়ে ৩টিসহ মোট ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার হবে।

বর্তমানে বাপেক্সের মাত্র পাঁচটি রিগ রয়েছে। এই পাঁচটি রিগ দিয়ে এত কাজ সম্ভব কি না- জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে আরও একটি রিগ আনার প্রস্তাবনা দিয়েছি। এটি আনতে পারলে মোট ছয়টি রিগ হবে আমাদের। আরও দুটি রিগ আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আটটি রিগ থাকলে আমাদের সক্ষমতা অবশ্যই আরও বাড়বে। আমাদের প্রতিটি রিগ হবে দুই হাজার হর্স পাওয়ারের।

সামনে কি কি পরিকল্পনা রয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, যে ১০০টা কূপের পরিকল্পনা রয়েছে সেখান থেকে আমরা বেশ কয়েকটা কূপের খননকাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে আসছি। সেটা আমরা চলতি বছরের জুলাই থেকেই কাজ শুরু করতে চাচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে বেগমগঞ্জ-৫, বেগমগঞ্জ-৬ এবং সুনেত্র-২। এ ছাড়াও আমরা সুন্দলপুর-৫, সুবর্ণচর-১, নোয়াখালী-১ প্রকল্প নিয়েছি। এবং সেমুতাং-৭, বেগমগঞ্জ-৭, চরলেখা-১ খনন প্রকল্পও আমরা নিয়েছি। এগুলোর সব কাজই ২০২৬ সালে শুরু করার কথা ছিল। এগুলোর সবই ওই ১০০টা কূপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেখান থেকে আমরা এগুলোর কাজ এগিয়ে নিয়ে আসছি। যা এই জুলাই থেকেই শুরু হবে। এরই মধ্যে আমরা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করেছি।

এ সময় তিনি ভোলার গ্যাসকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে বলেন, ভোলায় আমাদের আগের যে পাঁচটি কূপ রয়েছে তার জন্য আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। শাহবাজপুর-৫, ৭ এবং ভোলা নর্থ-৩, ৪, শাহবাজপুর নর্থ-ইস্টের জন্য আমাদের দরপত্র আহ্বান করা আছে। এ ছাড়াও আমরা শাহবাজপুর-৯, ১০, ভোলা-৫, ৬, ৭ আরেকটি প্রকল্প নিচ্ছি। সেটাও আমরা দরপত্রের মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণ করব। এগুলোর অধিকাংশ কাজই আমরা এগিয়ে নিয়ে আসছি। এগুলো চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই কাজ শুরু করেছি।

সিলেটের জকিগঞ্জে আরও দুইটা কূপ খনন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আগের একটা কূপ আমাদের পরীক্ষা করাই আছে। কিন্তু পাইপলাইন না থাকার কারণে এটি গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না। এখন আরও দুটি কূপ করলে হয়তো পাইপলাইন হবে। বাপেক্স একাই এই কূপগুলো খননকাজ করবে।

পাইপলাইন কোথায় গিয়ে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি যদি জকিগঞ্জ-২ এবং ৩ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে নির্মাণ করা পাইপলাইনটি কৈলাশটিলায় এসে মিলবে। এরপরই জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। রশিদপুরের ৯ নম্বর কূপের পাইপলাইনসংক্রান্ত জটিলতা কেটেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ। ওই কেন্দ্রের সব কূপ থেকেই জাতীয় গ্রিডে গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। এটাতে আর কোনো ধরনের জটিলতা নেই।

জলভাগের পাশাপাশি স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নতুন করে পিএসসি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাপেক্ষের অনুসন্ধান সক্ষমতা কতটুকু আছে? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, গ্যাসের মজুত তো দিন দিন কমে আসবে এটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমদানির বিকল্প হিসেবে জল এবং স্থল উভয় ভাগেই ব্যাপক হারে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এক্ষেত্রে বাপেক্সের একার পক্ষে তো আর সম্ভব না অনুসন্ধান চালানো। আমাদের যে সিসমিক টিম আছে এটা দিয়ে তো এত ব্যাপক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে পিএসসি করলে তো আমাদের দেশের জ্বালানি খাতের জন্য অবশ্যই ভালো হয়েছে।

বাপেক্স সব কাজই উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাপেক্সের সক্ষমতা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয় তার আসলে কোনো যৌক্তিকতা নেই। রিগের জন্য আমরা যে প্রস্তাবনা দিয়েছি মন্ত্রণালয় থেকে যদি তার অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা দরপত্রে যাব। এটির অনুমোদন হলেই আমরা আরও দুটি রিগের জন্য প্রস্তাবনা দেব।

যেহেতু উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেই কাজ হবে সেহেতু কাজ আরও আগেই শুরু করা সম্ভব তাই অনেক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি বিভাগের পরিকল্পনা ছিল ২০২৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে তিতাস ফিল্ডে পাঁচটি ক‚পের মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে বাপেক্সে এবং আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে। ২০২৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা গ্যাস ফিল্ডে চারটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে একইভাবে। ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দোয়ারাবাজারে একটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ, বিয়ানীবাজার-৩-এ একটি মূল্যায়ন কাম অনুসন্ধান কূপ এবং বিয়ানিবাজারে তিনটি কূপের খনন হবে।

এখন অনেক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থলভাগের যে ৬৯টি কূপে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হবে তার মধ্যে ৩৩টি কূপে অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। আরও ১০টি রিগ ভাড়ার মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হবে। বাকি ২৬টি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হবে। ফলে গ্যাস সংকট অনেকটাই কেটে যাবে বলে আমরা আশা করছি।