শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০৯:৫৭ এএম

বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কেন বাতিল করল ভারত?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০৯:৫৭ এএম

বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কেন বাতিল করল ভারত?

কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের কিছু পণ্য অন্য দেশে রফতানি হতো-ফাইল ছবি

ভারতের বন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আকস্মিকভাবে বাতিল করার ঘটনাকে ‌‘অস্বাভাবিক’ বলে বর্ণনা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশকে ভারত গত কয়েক বছর ধরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) সেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে।

প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হয়তো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার থেকে বলা হচ্ছে, কোনো সমস্যা দেখছে না তারা।

বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে বাংলাদেশের কোনও সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ভারত কেন, কোন উদ্দেশ্যে হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো? 

গত ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত, চার দিন ব্যাপী ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা এবং বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশে এই বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে ভারতের পক্ষ থেকে হঠাৎ এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তকে কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

প্রসঙ্গত, ট্রান্সশিপমেন্ট হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি দেশ তার পণ্য সরাসরি গন্তব্য দেশে না পাঠিয়ে মাঝপথে অন্য একটি দেশের বন্দর ব্যবহার করার মাধ্যমে রফতানি করে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পণ্য আমদানিও করা হয়।

কী কারণে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভারতের?

২০২০ সালের ২৯শে জুন বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে চুক্তি হয়েছিলো যে, ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়ায় ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় কোনও দেশে পাঠানো যাবে।

অর্থাৎ, পণ্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ভারতের সমুদ্র বা বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।

সাধারণত সরাসরি পণ্য পাঠানোর সুবিধা না থাকা, পরিবহন খরচ কমানোসহ বেশ কিছু কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমদানি-রফতানি করে থাকে। 

বাংলাদেশও এতদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য বা পশ্চিমের কোনো দেশে এবং ভারতের শুল্ক স্টেশন (ট্রানজিট রুট) ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে পারতো।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিনিয়োগ সম্মেলন চলার সময় ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে।

‘ভারত দেখেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে তার নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে এবং এটি ভারত পলিটিক্যালি (রাজনৈতিকভাবে) পছন্দ করছে না।’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।

‘বাংলাদেশের সাথে তোমরা বাণিজ্য করো না, এমন একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই’ ভারত এই সময়ে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

একইসাথে, ভারত বরাবরই জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের চেয়ে সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। তাই, ভারতের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, ভারত চাইছে, বাংলাদেশ যেন ভারতের বলয় থেকে বের না হয়ে যায়।

ভারতে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পেছনের কারণ নিয়ে নানান আলোচনার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাজনৈতিক কোনও কারণে নয় বরং নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার্থেই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের কর্মকর্তারা।

‘২০২০ সালে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আমাদের বিমানবন্দর এবং অন্য বন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জট তৈরি হয়েছিলো।’ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

‘এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিলো এবং বন্দরে আটকে পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছিলো। সেজন্য ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল থেকে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে’, বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তবে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হলেও নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অর্থাৎ, ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ শুধুমাত্র নেপাল ও ভুটানে আগের মতোই পণ্য রফতানি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন রণধীর জয়সওয়াল।

ভারতের পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা আগে থেকেই এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন উল্লেখ করেন দিল্লীর সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী। তিনি বলেন, এতোদিন সেটা শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্কের কারণে বাতিলে অসুবিধা ছিল।

তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু হাসিনা সরকার নেই, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাও চাইছিল বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের অ্যাডভান্টেজ(সুযোগ) নিতে। 

ভারতের গণমাধ্যমে চীনে ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই কাকতালীয় যোগাযোগটা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে।

তিনি জানান, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে অস্থিরতার সুযোগে ভারতের পোশাক রফতানির পরিমাণ বেড়েছে।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে?

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না।

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত যে আদেশ জারি করেছে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরে বড় কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীরাও।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্তটা বেশ অপ্রত্যাশিতই বলা চলে। তবে আমরা এই সুবিধা খুব যে বেশি ব্যবহার করতাম, তা না। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।

কারণ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানেই বেশি পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। আর এই দুই দেশে পণ্য রফতানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের প্রভাব পড়বে না।

তবে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাকসহ যেসব পণ্য রফতানি হয়, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গার্মেন্টসের যারা রফতানিকারক আছেন, অনেক সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রেতা দেশগুলোর কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য তারা ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন। এখন তারা সেটা পারবেন না। ফলে বাংলাদেশ থেকেই পণ্য পাঠাতে হবে।

এদিকে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের একজন রফতানিকারক জানান, ভারতের ভূখণ্ড বিমানবন্দর ব্যবহার করে গার্মেন্টস পণ্যের ‘সামান্য কিছু অংশ’ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে এ খাতে সেভাবে প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, দেশের সর্ববৃহৎ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের গেট থেকে রফতানি পণ্য বোঝাই চারটি ট্রাক ঢাকায় ফেরত পাঠিয়েছে ভারত।

কিন্তু বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন জানিয়েছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি এও জানান, গতকাল তারা ওই ধরনের তথ্য না পেলেও আজ ট্রান্সশিপমেন্টের একটি ট্রাককে তারা ভারতে পাঠাতে পারেননি। কারণ ওই ট্রাকটির পণ্য নেপাল বা ভুটানের জন্য নয়, অন্য একটি দেশে যাবে।

ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ পণ্য নেপাল-ভুটান বাদে অন্য কোনও দেশে রফতানি করা হয়- এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে মো. শামীম হোসেনকে বলেন, বন্দরে এই হার ‘খুবই সামান্য, খুবই কম।’

এদিকে, ভারত সরকারের ২০২৩ সালের এক হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, ওই বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার কিলোগ্রামের মতো বাংলাদেশি পণ্য অন্য দেশে রফতানি হয়েছিলো।

বাংলাদেশ এখন কী করবে?

এমন এক সময় ভারত থেকে এই সিদ্ধান্ত এলো, যখন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।

এখন, নতুন করে হাজির হওয়া এই সমস্যা সামলাতে কী করবে বাংলাদেশ?

বাণিজ্য উপদেষ্টা যদিও আজ বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংকট কাটাতে চেষ্টা করবো। নিজস্ব সক্ষমতায় প্রতিযোগিতায় যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে কাজ করছি যোগাযোগের ব্যাপারেও যাতে কোনো ঘাটতি না হয়।

সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, কিছু আছে অবকাঠামোগত বিষয়, কিছু আছে খরচ বৃদ্ধি, এসব নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, সমস্যা কাটিয়ে উঠব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, ভারত এই সুবিধা বন্ধ করায় বাংলাদেশের জন্য একদিক থেকে ভালো হয়েছে।

কারণ, এতে করে ‘ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমে যাবে’ এবং আর কোন কোন উপায়ে পণ্য পাঠাতে পারে, এখন সেদিকে মনোযোগ দিতে পারবে বাংলাদেশ।

অধ্যাপক ইয়াসমিনের মতে, বাংলাদেশ যদি এখন ‘এয়ার ট্রেডকে’ (আকাশপথে বাণিজ্য) আরও বেশি গতিশীল করতে পারে, তাহলে ভারতের প্রতি এই নির্ভরশীলতা থাকবে না।

তবে তিনি এও বলেন, ‘ল্যান্ড বর্ডারের কোনো বিকল্প নাই।’

তাই ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে ‘কিছুটা হলেও বাংলাদেশ ঝামেলায় পড়বে’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এটি বন্ধ করতে হলেও ভারতের আগে থেকে নোটিশ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আরবি/ আবু

Link copied!