শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক ও বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল

৪ ট্রাক পণ্য ফেরত পাঠাল পেট্রাপোল কাস্টমস

রূপালী প্রতিবেদক ও বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

৪ ট্রাক পণ্য ফেরত পাঠাল পেট্রাপোল কাস্টমস

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের গেট থেকে চারটি পণ্যবোঝাই বাংলাদেশি ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ভারত সরকারের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের কোনো প্রভাব পড়েনি দেশের চারদেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায়। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বন্দরটি দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাবন্ধা স্থলবন্দর ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ। নেপালে নিয়মিত আলু রপ্তানির ধারাবাহিকতায় গতকাল আরও ১৪৭ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক ফেরত পাঠায় ভারত। পরে রপ্তানিকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাক চারটি ঢাকায় ফেরত যায়। ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ২৯ জুন একটি চুক্তি করেছিল ভারত। 

ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই চুক্তি বাতিল করেছে। ২০২০ সালের ২৯ জুনের পর বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। 

হঠাৎ করে গত বুধবার ভারত বলেছে, যেসব পণ্যবোঝাই ট্রাক ইতিামধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলোকে দ্রুত ভারতের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে। আর এ আদেশের আগে যেসব পণ্য এন্ট্রি হয়ে আছে, তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। 

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ভারত সরকার ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করেছে। 

সে কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চারটি রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশের জন্য গেলে তা ফেরত পাঠায়। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঢাকার রপ্তানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের ছিল।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৃতীয় দেশের কোনো পণ্যে কার্পাস ইস্যু করেনি। ফলে গত বুধবার তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানির জন্য আনা চার ট্রাক পণ্য তারা রিসিভ করেনি।

এদিকে বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বাড়ানোর পর ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের এ খবর রপ্তানিকারকদের আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারসহ তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। দেশটির বিমানবন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্টও বন্ধ হয়ে গেল।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এর ফলে ভারত, ভুটানসহ কয়েকটি দেশে পণ্য রপ্তানি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হলো। ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতের ভূমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করে কম খরচে ও কম সময়ে এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার সুবিধা পেয়ে আসছিল বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার ফলে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তা ছাড়া পরিবহন (ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান) খাতেও ছিল একটি বড় আয়ের উৎস। 

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রপ্তানির পণ্যবোঝাই শত শত গাড়ি আসত বেনাপোল বন্দরে। সেখান থেকে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য আনলোড করে চলে আসত। এতে তারা নির্দিষ্ট একটি ভাড়া পেত। সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

অন্যদিকে ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় আর্থিক ক্ষতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে মহাসংকটে রয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি। 

এর মধ্যে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে কেবল পেট্রাপোল স্থলবন্দরেই ৪০ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা কনটেইনারগুলোতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং অন্যান্য পণ্য থাকত। এসব পণ্য ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে যেত। 

পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে প্রথমে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আসত। এরপর সেগুলো কাস্টমস সিল হয়ে জাতীয় সড়ক দিয়ে দিল্লি যেত। জাহাজেও যেত কিছু পণ্য। সেখান থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি হতো।

তিনি জানান, পেট্রাপোলে প্রতিদিন যদি ২০০ গাড়ি আসত, তার ৪০ শতাংশ থাকত এ ধরনের পণ্যের, অর্থাৎ ট্রান্সশিপমেন্টের গাড়ি। পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে আসত, তা আমাদের না এবং আমাদের দেশে বিক্রিও হয় না। সেগুলো বিক্রি হয় বিদেশে। তারা আমাদের বন্দরটি ব্যবহার করত মাত্র। 

কিন্তু যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তারা ৪০ শতাংশ কাজ হারাল। ট্রান্সশিপমেন্টে যেসব ট্রাক বা ট্রেলার যুক্ত ছিল, তারা কাজ হারাল। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো যারা বন্দর পর্যন্ত এই পণ্যগুলো পৌঁছে দিত, তারাও কাজ হারাল।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক: ভারত সরকারের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের কোনো প্রভাব পড়েনি দেশের চারদেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায়। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বন্দরটি দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাবন্ধা স্থলবন্দর ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ। নেপালে নিয়মিত আলু রপ্তানির ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আরও ১৪৭ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারেন্টিন ইন্সপেক্টর উজ্জ্বল হোসেন বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। আজ ১৪৭ মেট্রিক টন আলু নেপালে গেছে। এখন পর্যন্ত মোট ৩৪০২ মেট্রিক টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো। 

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। তবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। 

বিকেল পর্যন্ত বন্দরটি দিয়ে ভুটান থেকে ২৯ ট্রাক পাথর, নেপাল থেকে আখের চিটাগুড় ১১ ট্রাক, ভারত থেকে ৫ ট্রাক আতপ চাল, নেপাল থেকে ৩ ট্রাক কাচ, ভারত থেকে ১ ট্রাক পাথর এসেছে। অপরদিকে নেপালে রো-জুট ৮ ট্রাক, ফ্রেশ পটেটো ৭ ট্রাকে ১৭১ মেট্রিক টন, টিস্যু পেপার ৬ ট্রাক, কটন র‌্যাগস ২ ট্রাকসহ রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে গেছে।

বন্দরটি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারত ও নেপালে পাট, ওষুধ, প্রাণ ও ওয়ালটনের পণ্য, জুস, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। অপরদিকে মসুর ডাল, গম, ভুট্টা, চিরতা, হাজমলা, যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিক দানা, রেললাইনের স্লিপার, খৈল, আদা ও চিটাগুড় আমদানি করা হয়।

বাংলাবন্ধা স্থলবন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করলেও স্বাভাবিক রয়েছে আমাদের স্থলবন্দর। আগের দিনের মতোই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রয়েছে। সকাল থেকে বন্দরসংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আমদানি পণ্য প্রবেশ করছে ও রপ্তানি হওয়া পণ্য বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বন্দরটিতে ৪৯ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৪ ট্রাক রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করেছে।

গত মঙ্গলবার ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার সুবিধা বাতিল করে দেশটি। এতে বুধবার থেকে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের  দ্রুত ও স্বল্প খরচে বাণিজ্য করার পথ বন্ধ হয়ে গেলেও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!