গত দেড় মাসে সাতবার ভূমিকম্পে কেঁপেছে বাংলাদেশ। যা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে ৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের কাছাকাছি, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায়।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাঈয়্যাৎ কবীর এটিকে ‘স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
যদিও এসব ভূমিকম্পে এখনো বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তবে ভূ-গবেষকরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। তাদের মতে, ভূগর্ভে শক্তি জমতে থাকায় বারবার ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। যা বড় ধরনের একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি না নিলে পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে সংঘটিত দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প (প্রথমটি ৭.৭ এবং দ্বিতীয়টি ৬.৪ মাত্রার) বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়ও অনুভূত হয়েছিল। এতে মিয়ানমারে প্রাণহানি ঘটে তিন হাজার পাঁচশরও বেশি মানুষের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ভূমিকম্পের সংখ্যা ছিল ৫৪। যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ২৩টি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। বেড়েছে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ইউনিটের সংখ্যাও। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিল ৪টি, এখন তা ১৩টি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারীর মতে, ইতিহাস বলছে এই অঞ্চলে গড়ে ১৫০ বছরে একটি ৭ মাত্রার এবং ২৫০-৩০০ বছরে একটি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৭৬২ সালের বড় ভূমিকম্পের পর থেকে এখনো সেই মাত্রার ভূমিকম্প ঘটেনি, তাই বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা জোরালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার ভূমিকম্পের বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কাঠের টুকরোর একটি উপমা দেন। তিনি বলেন, কাঠের টুকরোর দু’পাশে যদি ক্রমাগত চাপ দেওয়া হয়, তবে এর ভেতরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে একসময় কাঠটি চিরে যেতে পারে। এক পর্যায়ে ফেটে যাবে। বাংলাদেশের আশপাশে যেসব ভূমিকম্প হচ্ছে, সেটা এখন কাঠের চিরে যাওয়ার মতো অবস্থায় আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার ছোট ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও অপরিকল্পিত শহরগুলোর জন্য বড় বিপর্যয়ের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। প্রয়োজন এখনই প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি, সচেতনতা এবং কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।