আজ চৈত্রসংক্রান্তি, বসন্তকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতির দিন আজ। বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। যদিও শহরে এর আবেদন কম, তবে গ্রামে কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলে আজও গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপিত হয় চৈত্রসংক্রান্তির দিন। বছরের বিদায়ী দিনে নানা আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ‘জীর্ণ-পুরাতন মুছে যাক, গ্লানির ছায়া ভেসে যাক’—এই প্রার্থনায় বাংলা নতুন বছরকে বরণ করবে বাঙালি।
চৈত্রসংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস করে থাকেন। চৈত্রসংক্রান্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন চড়ক পূজা। চৈত্র মাসজুড়ে সন্ন্যাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলেন। শারীরিক কসরত দেখতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসে জড়ো হয় চড়কমেলা-গাজনের মেলায়। মেলার সঙ্গে বিভিন্ন হিন্দু পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতার নাম সম্পৃক্ত। যেমন- শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন ইত্যাদি।
এই দিনে ব্যবসায়ীরাও পালন করেন বছর বিদায়ের অনুষ্ঠান। শুচি ও পবিত্রভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করে সাজানো হয় নতুনভাবে। পুরোনো হিসাব-নিকাশ শেষ করে নতুন খাতা খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, যাকে বলা হয় ‘হালখাতা’। নতুন বছরের প্রথম দিনে এই হালখাতা খোলা হয়, আর ক্রেতাদের আপ্যায়ন করা হয় মিষ্টান্ন দিয়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের নানা পাহাড়ি অঞ্চলে সংক্রান্তি উদযাপিত হয় সাড়ম্বরে। পাহাড়ে আজকের দিনেই হয় মূল উদযাপন বা বিজু। পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। প্রত্যেক বাড়িতে ১০ থেকে ২৫ প্রকার সবজি মিশ্রিত পাজন রান্না হয়। কমপক্ষে সাতটি বাড়িঘরে পাজন খাওয়া আবশ্যক বলে মনে করা হয়।
দেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে নানা ধরনের মেলা ও উৎসব হয়। হালখাতার জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, সংযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় চৈত্রসংক্রান্তি। যদিও চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে মেলার আয়োজন এখন কমে গেছে অনেকটাই।
আপনার মতামত লিখুন :