জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে আহত ৪৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে বিদেশে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন আরও ৫২ জনকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে পাঠানো হবে পাকিস্তানে এবং ২১ জনকে পাঠানো হবে তুরস্কে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। মূলত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগগুলো তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উপদেষ্টা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ৮৬৪ জন শহীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে এই সংখ্যা এখনও হালনাগাদ করা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
নূরজাহান বেগম বলেন, “আহতদের মধ্যে ৪৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন ব্যাংককে, ১৬ জন সিঙ্গাপুরে এবং একজন রাশিয়ায় চিকিৎসা নিয়েছেন। একেকজনের চিকিৎসায় সরকারের খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা—একজনের জন্য সাড়ে ছয় কোটি এবং আরেকজনের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা।”
বিদেশে চিকিৎসার জন্য নির্বাচিতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষ এবং ৩০ শতাংশ ছাত্র বলে জানান তিনি।
পাকিস্তানে আহতদের পাঠানোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। লাহোরে এমন কিছু হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে যুদ্ধাহত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বলেন, অনেকে আশঙ্কা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হলে আহতদের চিকিৎসা ও সেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিতে কাজ করছি। এজন্য তথ্য সংগ্রহ, হেলথ কার্ড প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চীন সরকার যে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে সম্মত হয়েছে, তার জন্য তিস্তা প্রকল্প এলাকার আশেপাশে জমি চূড়ান্ত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। সম্মেলনে জানানো হয়, অভ্যুত্থানের সময় ২১ জনের দুই চোখ এবং ৪৫০ জনের এক চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া, জীবন রক্ষার্থে ১৭ জনের পা এবং ৪ জনের হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।