মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এলডিসি পর্যালোচনা সভা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২৫, ১২:১২ এএম

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এলডিসি পর্যালোচনা সভা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এই উত্তরণে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে এ জন্য যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই এলডিসি দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভা করবে সরকার। আগামী ১৫ এপ্রিল বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে রূপালী বাংলাদেশ জানতে পেরেছে।

এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের সর্বশেষ মূল্যায়নেও বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। জাতিসংঘের ২০২৪ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিন সূচকেই বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়েছে কিংবা হওয়ার পথে রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই টানা তিনটি মূল্যায়নে সব সূচকে পাস করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক প্রতিবেদনে এভাবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ২০২৪ সালের ৪ থেকে ৮ মার্চ সিডিপির পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালে সিডিপি যখন এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে, তখন বলা হয়েছিল যে, ২০২৪ সালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হবে। এবার যে দেশগুলো উত্তরণের তালিকায় রয়েছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, অ্যাঙ্গোলা, লাওস, নেপাল, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সেপ ও সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ।

ডব্লিউটিওর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়তি শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে। ১৯৭৫ সালে এলডিসি তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য-সুবিধাসহ নানা সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি হলেও সমস্যায় পড়বে রপ্তানি খাত। কারণ, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নেও আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে (যেমন ভারত, চীন) এ ধরনের শুল্ক সুবিধা মিলছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপির আওতায় শুল্ক সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে।

এলডিসি তালিকা থেকে বের হলে বাংলাদেশের পাওয়া কিছু বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে। সমস্যা সমাধানে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডার, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের ওপর জোর দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। যাতে উত্তরণের প্রস্তুতির জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকে। একই সঙ্গে জোড় দেওয়া হচ্ছে, দের শ্রম মান, পরিবেশগত মান, সবুজ প্রশংসাপত্র ওপর। কারণ এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ যত বেশি সবুজ হবে এবং প্রশংসাপত্র প্রদর্শিত হবে, ততই স্বল্পোন্নত দেশ পরবর্তী সময়ে আমাদের বিশ্ব বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়বে।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়া আমাদের জন্য বিকল্প নয় বরং আমাদের এটি করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে, আমাদের পেটেন্ট মান এবং কমপ্লায়েন্টের মান বাড়ানোর দরকার হবে। মূলত ব্যবসা করার সহজতা আরও উন্নত করা হলে এবং বিদ্যমান বাজার অর্থনীতিকে আরও বাজার অর্থনীতিতে পরিণত করা গেলে বাংলাদেশ দুবাই এবং সিঙ্গাপুরের মতো একটি হাবে পরিণত হতে পারে। এই উদ্দেশ্যে সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করছে।

এলডিসি থেকে কোনো দেশের বের হওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করে সিডিপি। প্রতি তিন বছর পর এলডিসিগুলোর মূল্যায়ন করা হয়। কোনো দেশ এলডিসি তালিকা থেকে বের হতে পারবে কি না, সে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিন সূচকের ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। সিডিপির সর্বশেষ ২০২৪ সালের মূল্যায়নে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ সব সূচকেই উত্তীর্ণ হয়েছে। যেমন বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৬৮৪ ডলার। মাথাপিছু আয় সূচকে মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১ হাজার ৩০৬ ডলার হতে হয়। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্টের ওপরে থাকতে হয়, যা বাংলাদেশের আছে সাড়ে ৭৭ পয়েন্ট। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও পরিবেশের ভঙ্গুরতা সূচকে একটি দেশের ৩২ পয়েন্টের নিচে থাকতে হয়। এটি বাংলাদেশের ২১ দশমিক ৯ পয়েন্ট।

সিডিপির সুপারিশগুলো ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ওঠার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে বাংলাদেশ বাড়তি আরও দুই বছর সময় পায়। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে বের হবে বাংলাদেশ। যদিও এই মুহূর্তে সামষ্টিক অর্থনীতি চাপে আছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বিশাল জনগোষ্ঠী খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছে। এসব বিষয় জাতিসংঘের পর্যালোচনায় বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

বর্তমানে বিশ্বে ৪৪টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে। এলডিসি দেশগুলোও একধরনের উন্নয়নশীল দেশ। যেসব দেশের সক্ষমতা তুলনামূলক কম, তাদের এই তালিকায় রাখা হয়। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। এ পর্যন্ত গত পাঁচ দশকে সব মিলিয়ে মাত্র আটটি দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে।

আরবি/একে

Link copied!