বাংলা ক্যালেন্ডারের নতুন পাতায় যুক্ত হলো এক নতুন বছর, এক নতুন সম্ভাবনা। বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের উৎসব এই দিনটি শুধু ক্যালেন্ডার বদলানোর দিন নয়, বরং মনের ভেতর জেগে ওঠা নতুন স্বপ্ন, নতুন শপথের প্রতীক।
আজ আমরা পুরোনো গ্লানি, দুঃখ আর ক্লান্তিকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে যাই আশার পথে। শহর থেকে গ্রাম সবখানে বাজছে ঢাকের বাদ্য, মুখে মুখে ফিরছে ‘শুভ নববর্ষ’। বৈশাখী রঙে রঙিন বাংলার আকাশ-বাতাস।
বাংলাদেশজুড়ে যথারীতি বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে সবাই। তবে এবার শুধু বাঙালিরাই নয়, দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে এই উদযাপনে। সরকারি উদ্যোগেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বর্ষবরণ উৎসবও এবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মূল আয়োজনের সঙ্গে।
সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা বছরের হিসাব বহু পূর্বে থেকেই পালিত হয়ে আসছে। সাধারণত গ্রেগরীয় পঞ্জিকার এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই সৌর বছরের সূচনা হয়। আসাম, বঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও ত্রিপুরায় বহুদিন ধরেই এই দিনটি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। আজকের মতো সর্বজনীন উৎসবের রূপ তখন ছিল না।
মুঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রচলন শুরু হয়। সেই সময় চৈত্র মাসের শেষ দিনে প্রজাদের সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। পরদিন, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে জমির মালিকেরা প্রজাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। এই উপলক্ষে আয়োজিত হতো নানা উৎসব। যা ধীরে ধীরে একটি সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।
তখন এই দিনটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল হালখাতা। নতুন হিসাব খাতা খোলার দিন। দোকানদাররা পুরোনো বছরের দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে নতুন খাতা খোলেন এবং তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এটি শহর, গ্রাম, হাটবাজার সব জায়গাতেই সমানভাবে প্রচলিত ছিল।
বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে থাকেন। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি প্রধান ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে প্রত্যেকেরই নতুন বছরের নিজস্ব উৎসব রয়েছে—ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই, এবং চাকমাদের বিজু। এ উৎসবগুলোও এখন নববর্ষের সার্বজনীন উদযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে।
এই পহেলা বৈশাখ হোক আনন্দময়, হোক সম্প্রীতির, হোক বাঙালিয়ানার সত্যিকারের প্রকাশ।
আপনার মতামত লিখুন :