বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে প্রথমবারের মতো এ বছর নিষেধাজ্ঞার সময় ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত, ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছগুলোতে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল ৬৫ দিনের জন্য।
মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, জাটকা ধরার ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাসহ বছরে মোট ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হত জেলেদের। এখন তা আট দিন কমে গেল।
মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়।
২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিসহ অবস্থার মুখোমুখি হন। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করার জন্য বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নৌ অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরে আসছিলেন। সেই সঙ্গে দেশের মৎসবিজ্ঞানীদেরও বিষয়টি নিয়ে গবেষণার তাগিদ ছিল।
বরগুনা জেলা মৎসজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি মৎস উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এর সাথে আমরা বৈঠক করেছি। তখন আমরা তাকে বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করে আসছিলাম। কারণ, এতে সাগর-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছিল। জেলেরা খুব কষ্টে আছেন। দীর্ঘদিন পর হলেও এই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুব খুশি।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান জানান, ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এই নিষিদ্ধ সময়ে যাতে করে সমুদ্রগামী কোন নৌযান মাছ শিকারে যেতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পাথরঘাটা স্টেশনকে বিষখালী নদী ও নৌ পুলিশ ফাঁড়ি চরদুয়ানীকে বলেশ্বর নদীর মোহনায় চেকপোস্ট স্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে যাতে সাধারণ মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম।
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মাঝি-মাল্লাদের পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় আনা হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে তারা সরকারের কাছ থেকে রেশনিং সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নানা সহায়তা দেওয়া হতে পারে। যাতে তারা মাছ ধরতে না গিয়ে সাগরের মৎস ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :