জীবনে সুখের আশায় অনেকেই দেশের বাইরে যান বাড়তি ইনকামের জন্য। সেই চাকরিই যে কারো করো প্রাণ নিতে পারে ভাবলেও অবাক লাগে। তেমনই ঘটনা ঘটে চলেছে বর্তমানে বাংলাদেশে।
চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ায়। এরপর সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদের পাঠানো হয় ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে দেশে। আর এই প্রেক্ষাপটে দেশের বেশ কিছু পরিবার মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের আদরে সন্তানকে ফিরে পেতে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় এক ডজন পরিবার তাদের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে নিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাদের ছেলেদের ভুল বুঝিয়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়েছে।
মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ (২২)। গত ২৭ মার্চ রুশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় নিহত হন বলে দেশে একটি খবর আসে। এরপর থেকে ইয়াসিনের উদ্বিগ্ন স্বজনেরা মস্কোয় বাংলাদেশি কূটনীতিকদের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন।
ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম জানান, ঈদের সময় ইয়াসিনের এক বন্ধু তাদের ফোন করে এই খবর জানান।
আবুল হাশেম এএফপিকে বলেন, ‘ইয়াসিনের বন্ধু নিজেও রুশ পক্ষে যুদ্ধ করছে। সেও বাংলাদেশি। ঈদের দিন সে আমাদের ফোন করে জানায় যে, ইয়াসিন মারা গেছে। পরে, আমরা এক রুশ কমান্ডারের কাছ থেকে ফোন পাই একই বিষয়ে।’
রাশিয়া থেকে ফেরত আসা আকরাম নামের এক ভুক্তভোগী জানা , আমরা কল্পনাও করিনি যে আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এজেন্সি বলেছিল শুধু রাশিয়ার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমরা রাজি হয়ে যাই। কিন্তু পরে দেখা গেল, আমরা একেবারে যুদ্ধের মুখোমুখি।
তিনি আরো জানান, তিনি সেনেগালের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন, তবে তার ভগ্নিপতি এখনও রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে রয়েছেন।
আকরাম বলেন, ‘কয়েক হাজার ডলার খরচ করে তবেই আমি দেশে ফিরেছি। যদিও আমার শ্যালক এখনো রাশিয়ায় রয়ে গেছে। সেখানে সে রুশ সেনাবাহিনীতে আছে।’
আকরামের শ্যালক নিয়মিত বাড়িতে ফোন করেন। যোগাযোগ রাখেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পরিবারকে অনুরোধ জানান, এমনটাই বলছিলেন রাশিয়াফেরত আকরাম।
শুধু বাংলাদেশ নয় এই তালিকায় রয়েছে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো কয়েকটি দক্ষিণ এশীয়ার কয়েকটি দেশ। যাদের বেশিরভাগই চাকরির আমায় গিয়ে রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
ফরহাদ হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী এএফপিকে বলেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, মস্কোর পক্ষে যারা যুদ্ধ করছেন তারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, বেতন পাচ্ছেন এবং যুদ্ধের নিয়মকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন।’
ঠিক কতজন বাংলাদেশি রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন এবং রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছেন এ বিষয়ে ফরহাদ হোসেন সঠিক সংখ্যা বলতে পারেননি।
তবে বাংলাদেশি একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে যে, এই সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :