প্রায় ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ‘কাশ্মীর ইস্যু’ তুলে ধরেছে পাকিস্তান। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এ প্রসঙ্গ তোলেন বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবৈধভাবে অধিকৃত ভারতীয় জম্মু ও কাশ্মীর (আইআইওজেকে)-এর পরিস্থিতি সম্পর্কেও বাংলাদেশকে অবহিত করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মীরের জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এ বিরোধের দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।’
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা’র ত্রাণ অর্থ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং সম্পদ বণ্টনসহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক বিষয় বৈঠকে উত্থাপন করা হলেও সেগুলোর উল্লেখ পাকিস্তানের বিবৃতিতে ছিল না।
বৈঠকে দুই দেশই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবনের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বহুপাক্ষিক ইস্যুতে আলোচনা ও সহযোগিতার জন্য সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে উভয়পক্ষ।’ বাংলাদেশের বিবৃতিতেও সার্কের অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে একযোগে কাজ করার গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন (মূল খবরে জসিম উদ্দিন বলা হয়েছিল, তবে বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব হচ্ছেন মাসুদ বিন মোমেন; এটি সংশোধন করা হয়েছে)। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অংশ নেন পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে যেসব বিষয় তোলা হয়, সেগুলোর মধ্যে ছিল ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণ, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ভোলার ত্রাণের অর্থ ফেরত দেওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পদের বণ্টন ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দুই দেশের মধ্যে সুদৃঢ় ও মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলার স্বার্থে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, শিগগিরই ইসলামাবাদে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর দিকেও অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য পাট ও টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’
এ ছাড়া মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির সনদের লক্ষ্য পূরণ এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
এ মাসেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।